অস্ট্রিয়া বলতেই কী মনে পড়ে? আমার তো সবার আগে মনে পড়ে যে ছোটবেলায় অস্ট্রিয়াকে প্রায়ই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতাম। তারপর ভুগোল পড়তে পড়তে জানলাম কোনটা কোন মহাদেশে, কতদূরে। অস্ট্রিয়া মানেই ভিয়েনা কনভেনশন আর সলজবার্গের পটভূমিকায় ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’ ছবিটি। এ ছাড়া বিখ্যাত জায়গা বলতে হলস্ট্যাট আর ইন্সব্রুক। হলস্ট্যাট ছাড়া আরও অনেক ওরকম ছোট ছোট পাহাড়ে আর লেকে ঘেরা গ্রাম আছে যদিও, কিন্তু হলস্ট্যাট পর্যটকদের বেশি পছন্দ যাতায়াতের সুবিধার জন্য, সলজবার্গ থেকে দু ঘন্টা মোটে। ইন্সব্রুকে আমরা যাইনি গতবার, সেও পাহাড়ে ঘেরা আর Swarovski ক্রিস্টালের ফ্যাক্টরি/মিউজিয়াম আছে।
ব্রাসেলস থেকে সলজবার্গ যেতে গোটা দুই-তিন ট্রেন পালটাতে হয়, সময়ও বেশি লাগে, তাই আমরা ফ্লাইটে পৌঁছলাম ভিয়েনা। এয়ারপোর্টে ব্রেকফাস্ট করে নীচের টার্মিনালে গিয়ে ট্রেন ধরে পৌঁছলাম সলজবার্গ। ইউরোপের এই ট্রেন জার্নি গুলো আমার ভীষণ প্রিয়। ছোট ছোট গ্রাম, জনপদের ওপর দিয়ে হুশ হুশ করে হাই স্পীড ট্রেন চলে, চওড়া জানালা দিয়ে স্বচ্ছ নীল আকাশ দেখা যায়, কোথাও পাহাড়, কোথাও ব্রীজের তলায় বয়ে যাওয়া খরস্রোতা ঝর্ণাসম নদী, আবার কোথাও ঝম ঝম করতে করতে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে যাত্রা। এমন অফুরান সৌন্দর্য্যের ভান্ডার দেখে দেখেও মন ভরে না যেন। যাইহোক, সলজবার্গে এসে দুপুর বারোটায় আবার ক্ষিদে পেয়ে গেল। স্টেশনের বাইরে একটা ছোট্ট লেবানিজ দোকানে পিটা ব্রেড – দোনের কাবাব দিয়ে লাঞ্চ সেরে হোটেলে পৌঁছলাম। বাকি দিনটা সলজবার্গের কাসল ও কিছুটা শহর দেখে ক্লান্ত হয়ে দিনের শেষে ঢুঁ মারলাম হোটেল থেকে এক কিমি দূরে এক ফিউশন ওপেন এয়ার রেস্তোঁরায়। জুলাইয়ের গরমে রোদে ঘুরে আমি বেশ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই সবার আগে অর্ডার দেওয়া হল ঠান্ডা ক্রাফট বিয়ার।
জার্মানি আর অস্ট্রিয়া তাদের হালকা আর সুস্বাদু বিয়ারের জন্যে বিখ্যাত, গরমকালের আদর্শ। খোলা বাগানে গোধূলির আলোয় বসে ঠান্ডা বিয়ারে চুমুক দিয়ে পরের অর্ডার সোজা পোর্ক শ্নিটজেল (schnitzel), সঙ্গে রোজমেরি দিয়ে রোস্ট আলু আর ক্র্যানবেরি চাটনি। ভাজাভুজি আমার খুব প্রিয়, তাই শ্নিটজেল পেলে সুযোগ ছাড়ি না। অপর পক্ষের অর্ডার হল রোস্ট পোর্ক, সঙ্গে আলুর সেদ্ধ পুলি আর একটু সব্জি দিয়ে গ্রেভি। দুটোই প্রচন্ড ভাল ছিল, এবং ফিউশন বললেও, এগুলি অস্ট্রিয়ার নিজস্ব খাবার, ঘরের খাবার। বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে, ঠান্ডা হয়ে আমরা হেঁটে হোটেলে ফিরে ঘুম দিলাম।
পরের দিন সকালে উঠে রেডি হয়েই সলজবার্গ স্টেশনে গিয়ে বাস ধরে রওনা দিলাম, নামব বাদ ইশল (Bad Ischl) বলে এক জায়গায়, সেখান থেকে ট্রেন ধরে সোজা হলস্ট্যাট। এই বাস-ট্রেন সফর এবং হলস্ট্যাটে ঘোরা নিয়ে আলাদা করে লিখব পরে, সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা, জীবনে না ভোলার মত। আমি আমেরিকায় থাকলেও পাহাড় ঘেরা জায়গাগুলিতে ঘোরার সুযোগ হয়নি, ছাত্রজীবনে পয়সাও ছিল না। আর ইউরোপে এসেও এখনো সুইজারল্যান্ড যাইনি। কাজেই হলস্ট্যাট আমার সেরা লেগেছে। চারিদিকে পাহাড়, মাঝে বিশাল লেক আর তার ধারে রাস্তা ও ফুটপাথ কেটে দোকানপাট বাড়িঘর, অসাধারণ সুন্দর।