কলকাতা ১৭
খাওয়ার জন্যেই তো বাঁচা। অন্তত আমার মত অধিকাংশ বাঙালীরই তাই। শুধু বাঁচার জন্যে কষ্ট করে দই-শশা খেয়ে আর কদিন থাকা যায় বলুন! তাই রোজকার ভাত-ডাল-মাছের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে মাঝে মাঝে রেস্তোঁরায় ঢুঁ মারি। কখনও হতাশ হতে হয়, কখনও বা দিল খুশ হয়ে যায়। নিজেদের চেনা খাবার, কখনো বা ঘরের খাবারই নতুন আঙ্গিকে আর স্বাদে বাইরে খেয়ে আসি। মেক্সিকান-ইতালিয়ান-থাই-চীনে-জাপানি রেস্তোঁরাগুলো বাদ দিলাম, ওসবে আমি-আপনি মুখ বদলেই থাকি। ম্লেচ্ছ ছেড়ে প্রবাসে বাঙালী খাবারের খোঁজ করে, তারই কয়েক ঝলক আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তবে আমি একা নই, আপনারাও লিখতে পারেন খাই খাই-তে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যে কোনো বাঙালী খাবারের দোকানের ব্যাপারে লিখে আমাকে জানাতে পারেন এই মেল আইডিতে – chernozems.prb@gmail.com। যথাযথ হলে সেটা এখানে নিশ্চয়ই ছাপা হবে।
গৌরচন্দ্রিকা অনেক হল, এবার একটু খাই খাই করি।
কলকাতা ১৭, পুণে
ঠিকানা – সিদ্ধার্থ রয়াল হোমস, দত্ত মন্দির চৌক, বিমান নগর, পুণে – ৪১১০১৪
ফোন – +৯১-৮৮৮৮৩১৭১৯৯
বসে খান | ঘরে আনিয়ে খান | আমিষ | সুরারসে বঞ্চিত | শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
সময় – দুপুর ১২ ৩০ থেকে রাত ১০টা
আলোচনা –
খাদ্যরসিক বাঙালী বিরিয়ানি নামক পরশপাথরের খোঁজে খ্যাপার মত এদিক ওদিক ফেরে। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। কলকাতা শহর ছেড়ে বছর সাতেক হয়ে গেল, প্রবাসী শহরগুলোয় বিরিয়ানি চাখতে চাখতে মনটা উদাস হয়ে যায়।
“এমন একটা বিরিয়ানি খুঁজে পেলাম না
যার স্বাদ আছে,
এমন একটা বিরিয়ানি খুঁজে পেলাম না
যার গন্ধ আছে…”
স্বাদ আর গন্ধ মিলিয়ে ভাল ‘কলকাতা বিরিয়ানি’ জিনিসটা খুব দুর্লভ। কোথাও ভাত আর মাংসের কোনো যুগলবন্দি নেই তো কোথাও মিঠা আতরের আতিশয্যে অন্য কিছু বোঝা যায় না। বহুদিন ধরে বহু রেস্তোঁরা ঘুরে অবশেষে এক বন্ধুর সুপারিশে কলকাতা ১৭তে এসে পৌঁছলাম।
প্রথমেই বলি, জায়গাটি খুবই ছোট। সারি সারি দোকানের উপর দোতলায় একটা মাঝারি হলঘরে রেস্তোঁরা। বসার টেবিল আছে চার-পাঁচটি, একটা কাউন্টার, তার পেছনে রান্নাঘর আর একটা মিনি বাথরুম। টেবিল খালি পেলে বসে পড়ুন, নইলে প্যাক করে নিয়ে যান। আমরা যেহেতু শুধুই বিরিয়ানি খেতে গেছিলাম, তাই অন্য কিছু খেয়ে দেখিনি রান্না কেমন। অন্যান্য রেস্তোঁরার মত বাঙালী দোকানে কেউ বোধহয় পরিবেশন নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। প্রবাসে এমনিতেই কর্মী কম পাওয়া যায়; আপনি ডাকবেন, তাঁরা সময় পেলে এসে অর্ডার নেবেন।
আমরা ‘কলকাতা বিরিয়ানি’ অর্ডার করে সময়টা মাপি। হাঁড়ি থেকে কেটে পরিবেশন করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। আর যদি লাগে তবে মনে হয় কেউ মাংস-ভাত-আলু-আতর একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে এল। কলকাতা ১৭তে ঠিক সাত-আট মিনিটের মাথায় সে এল – চিকেন বিরিয়ানি। মাটন বিরিয়ানির দামটা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখে আমরা চিকেন অর্ডার করেছিলাম মনের দুঃখে। গন্ধ বেশ ভাল, কারুর পাতেই আতর বেশি পড়েনি। আলুগুলি চমৎকার সেদ্ধ হয়েছে এবং আলুনি নয়! ডিম সেদ্ধ – আছে। মুর্গী – মোটামুটি খেতে, বেশ প্যাংলা সাইজের। খুশকাও দিব্যি খেতে, তবে গোটা প্লেটে পরিমাণ একজনের অনুপাতে একটু কম। খেয়ে ঠিক পেট ভরবে না। এর পর আমরা নিলাম এক প্লেট লার্জ মাটন বিরিয়ানি।
তিনি এলেন। লার্জ বলে দু পিস মাংস – যথাযথ মশলা এবং তাপে ভাপানো। আশ্চর্য্যভাবে চিকেনের থেকে মাটনের প্লেটটা বেশি ভাল খেতে ছিল, সেটা মাংসের কারণে হতে পারে। মুর্গীর আবার বিরিয়ানি কবে ভাল হল বলুন! সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা খারাপ নয়, পুণের অন্যান্য ‘কলকাতা বিরিয়ানি’র তুলনায় সবচেয়ে ভাল।
গলদ –
অতিরিক্ত গোলমরিচের গুঁড়ো মাঝে মাঝেই মুখে পড়ে।
রেগুলার প্লেটের পরিমাণ দামের তুলনায় কম।
চিকেন বিরিয়ানিতে কোথাও একটা স্বাদে গোলমাল।
Zomato কত দিল – 2.9/5
Burrp কত দিল – 3/5
আবার যাব? হ্যাঁ, শুধু বিরিয়ানি খেতে।