বাকিটা ব্যক্তিগত
ডিটেল –
ভাষা – বাংলা, রিলিজ তারিখ – ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩, দৈর্ঘ্য – ২ ঘন্টা ২৩ মিনিট, ছবি – রঙীন, গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ – প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, সঙ্গীত – অনিন্দ্য সুন্দর চক্রবর্তী, পরিচালনা – প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, অভিনয়ে – ঋত্বিক চক্রবর্তী, অমিত সাহা, মনু মুখার্জী, চূর্ণী গাঙ্গুলী, অপরাজিতা ঘোষ দাস, দেবেশ রায়চৌধুরী, সুপ্রিয় দত্ত, মাধবী মুখার্জী
সমালোচনা –
আপনি কি প্রেমে পড়েছেন? বা পড়তে চান? খুব চেষ্টা করছেন কিন্তু হচ্ছে না? তাহলে মোহিনীতে যান। হ্যাঁ, মোহিনী একটি গ্রামের নাম, যেখানে গেলেই সবাই প্রেমে পড়ে যায়। তারপর কী হয় কেউ জানে না, কিন্তু প্রেমটা নিশ্চিত হয়। সিনেমার গল্প হিসেবে নিঃসন্দেহে বেশ অভিনব।
আমার মত আরো অগণিত দর্শক নিশ্চয়ই ছবিটি বড় পর্দায় দেখেননি। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’। ২০১৩-এর শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবির জাতীয় পুরষ্কার পেল। তারপরেই আমরা নড়েচড়ে বসলাম সে ছবিটা দেখতে হবে, কাকা! টিভি চ্যানেলের দয়ায় কয়েকজন তবু দেখতে পেলেন, যদিও সেটা জাতীয় পুরষ্কার পাওয়ার আগে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, ছবিটা বড় পর্দায় এক সপ্তাহের বেশি চলেনি। ‘সৃজিত মুখার্জী প্রেজেন্টস’ এর তকমা লাগানোতে অন্তত ছবিটা রিলিজ হয়েছিল, কিন্তু চলেনি, মাল্টিপ্লেক্সই হোক বা একক স্ক্রিনে। যাকগে, এগুলো সব শুকনো শুঁটকো তথ্য, জেনে আমার আপনার কী হবে। জাতীয় পুরষ্কার পাওয়া ছবি দেখা হয়ে গেছে, লিস্টে টিক মেরে বসে পড়ুন। এবার ছবির কথায় আসাই ভাল।
গল্পটা তো বেশ আনকোরাই, তার সঙ্গে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি গ্রামবাংলার ছবিছাবা এবং লোকসঙ্গীত। শেষেরটা শহুরে লোকেরা সত্যিই জানেনা, আমিও না, সেটা স্বীকার করতে লজ্জা নেই। আমরা অনেকেই গ্রামে গেছি হাতে গুণে কবার, তার মধ্যে লোকসঙ্গীত চর্চা করার নিশ্চয়ই সময় হয়নি। পরিচালকের কল্যাণে অনেকটা দেখলাম, শুনলাম, জানলাম। এরপর আসি কুর্ণিশে – অনেকে আছেন তো লাইনে – প্রথমেই ঋত্বিক চক্রবর্তী। এঁকে নতুন করে কিছু বলার নেই। খুরে খুরে নমস্কার। এহেন অভিনয় আর ব্যক্তিত্ব খুবই দুর্লভ। বাকি প্রত্যেকটি চরিত্রের অভিনেতারা – অমিত সাহা, অপরাজিতা ঘোষ দাস, মনু মুখার্জী, চূর্ণী গাঙ্গুলি – অসাধারণ, যথাযথ। কোথাও এতটুকু খামতি-বাড়তি নেই। জ্যোতিষীর ভূমিকায় সুপ্রিয় দত্ত অনবদ্য।
মোহিনীতে গিয়ে কী হয়, প্রধান চরিত্র প্রমিত প্রেমে পড়ে কিনা, পড়লেও তার পরিণতি কী হয়, তার আগে সে মোহিনীর সন্ধান পায় কী করে – পুরোটাই খুব সুন্দর সূত্রে বাঁধা, কোথাও অপ্রয়োজনীয় মনে হয় না। পুরোটা জানতে হলে আপনাকে ছবিটা দেখতেই হবে। পরিচালকের মুন্সিয়ানা অনেক ক্ষেত্রে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় – চিত্রনাট্য/সংলাপ থেকে ক্যামেরা, তার অ্যাঙ্গল, ক্লোজ আপ এবং সর্বোপরি ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর কীরকম হবে – সবটাই দুর্দান্তভাবে করা।
প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের একটি টেলিফিল্ম কজন দেখেছিলেন জানিনা – ‘পিঙ্কি আই লাভ ইউ’ – ঋত্বিক এবং অপরাজিতা সেখানে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সিনেমার সমমানের একটি টেলিফিল্ম ছিল, এবং অভিনেতারা সেখানে চিত্রনাট্যের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করেছিলেন। না দেখে থাকলে টেলিফিল্ম এবং ছবি দুটোই দেখে ফেলুন। তারপর আমি নিশ্চিত, আমার মত আপনারাও প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের পরের কাজের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন।
‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ একেবারে অন্য স্বাদের সিনেমা। প্রথম দিকে কলকাতা শহরের টুকরো ছবি এবং তারপর গ্রামের বিস্তৃত ছবি – দুইই অতুলনীয়। দু একটি জায়গায় সঙ্গীতের মাত্রা হয়ত একটু বেশি, তাছাড়া ছবিটি ত্রুটিহীন। ভীষণ ভাল লেগেছে।
আমি কত দিলাম – 4.5/5 (পাঁচে সাড়ে চার)
IMDb কত দিল – 8.2/10