বর্ষপূর্তি
আজ এ পরবাসে বছর ঘুরে গেল ।
ঠিক এক বছর আগে যেদিন সব ছেড়ে আসছিলাম,
সেই দিন, সেই রাত্রির প্রত্যেকটা অনুপল এখনও স্পষ্ট,
একাকী মুহুর্তে স্মৃতিতে চারিত হবার, বা হয়তো
শুধুমাত্র মননে লিপিবদ্ধ থাকার জন্য।
সেদিনের সেই বিচ্ছিন্নতার অনুভুতি – প্রিয়জন দের
প্রিয়জনকে রেখে, অনির্দিষ্টকালের যাত্রার প্রস্তুতি,
জোর করে কান্না চাপার চেষ্টা, নিজের – নিজেদের,
সব মনে আছে। কিছু ভুলিনি, বিশ্বাস করো।
এ পরবাস শরীরের, মনের, তবে আত্মার নয়।
আমার সমস্ত সত্তা আজও ওখানেই, নিজের ঘরে,
আজও প্রত্যেক সকালে ওঠার সময় শুনতে পাই
বাবা ডাকে, “মুন্নি , উঠে পড় মা , দেরি হয়ে যাবে।”
মেঘলা দিনে বুঝতে পারি মা বলে, “ছাতা নিয়ে বেরোস কিন্তু।”
দেশি দোকানে ফুচকা দেখলে চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে
আমাদের অট্টহাসিতে কলেজ গেটে দাঁড়ানো
ফুচকাওয়ালার পিলে চমকে যাওয়া।
প্রযুক্তির দয়ায় আজকাল ওয়েবক্যামে মা বাবা কে দেখতে পাই,
কথা/হাসি/কান্না সবই হয়।
এ পরবাস তাহলে দৃষ্টির বা শ্রবণের নয়।
আসলে পরবাস স্পর্শের –
মায়ের হাতের, বাবার স্নেহের ডাকের,
বসার ঘরের ঠান্ডা মেঝেটার,
বৃষ্টি আসার ঠিক আগের সোঁদা হাওয়ার,
রোদ এ তেতে থাকা ক্যান্টিনের টেবিলটার,
নিজের ঘরের জানালা দেওয়াল বালিশের,
বাড়ির গলির এবড়ো খেবড়ো রাস্তার,
এবং আরো।।
গোটা একটা জীবন ছাপানো আরো অনেক কিছুর স্পর্শ।
এই তো পরবাস,
এক বছরের, না জানি আরো কত বছরের।
* এই কবিতাটি মাধুকরী তে প্রকাশিত *