টপ ইন টাউন
খাওয়ার জন্যেই তো বাঁচা। অন্তত আমার মত অধিকাংশ বাঙালীরই তাই। শুধু বাঁচার জন্যে কষ্ট করে দই-শশা খেয়ে আর কদিন থাকা যায় বলুন! তাই রোজকার ভাত-ডাল-মাছের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে মাঝে মাঝে রেস্তোঁরায় ঢুঁ মারি। কখনও হতাশ হতে হয়, কখনও বা দিল খুশ হয়ে যায়। নিজেদের চেনা খাবার, কখনো বা ঘরের খাবারই নতুন আঙ্গিকে আর স্বাদে বাইরে খেয়ে আসি। মেক্সিকান-ইতালিয়ান-থাই-চীনে-জাপানি রেস্তোঁরাগুলো বাদ দিলাম, ওসবে আমি-আপনি মুখ বদলেই থাকি। ম্লেচ্ছ ছেড়ে প্রবাসে বাঙালী খাবারের খোঁজ করে, তারই কয়েক ঝলক আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তবে আমি একা নই, আপনারাও লিখতে পারেন খাই খাই-তে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যে কোনো বাঙালী খাবারের দোকানের ব্যাপারে লিখে আমাকে জানাতে পারেন এই মেল আইডিতে – chernozems.prb@gmail.com। যথাযথ হলে সেটা এখানে নিশ্চয়ই ছাপা হবে।
গৌরচন্দ্রিকা অনেক হল, এবার একটু খাই খাই করি।
টপ ইন টাউন, পুণে
ঠিকানা – ১৩, আর ডেকান মল বিল্ডিং, ডেকান পোস্ট অফিসের পেছনে, জংলি মহারাজ রোড, পুণে
ফোন – +৯১-৯৮৮১১৩০৩৬৬
বসে খান | আমিষ | সুরারসে বঞ্চিত | ঘরে আনানো যাবে না | পাখা আছে এসি নেই
সময় – দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা
আলোচনা –
রবিবার দুপুরে কেউ যদি পরোটা আর কষা মাংসের লোভ দেখায়, কী করবেন?
আপনি কী করবেন জানিনা, তবে আমার পক্ষে সেই লোভ সামলানো কঠিন। তাই পড়ন্ত শীতের এক দুপুরে জনৈক বন্ধু আমাদের বগলদাবা করে নিয়ে গেল কাঙ্খিত কষা মাংস খাওয়াতে। বন্ধুমহলে প্রচলিত যে আমাদের কর্তা-গিন্নিকে মাংসের লোভ দেখিয়ে কেউ সহজেই গুম করে দিতে পারে। সে নিন্দুকে যাই বলুক না কেন, কষা মাংসের জন্যে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। খুঁজতে খুঁজতে টপ ইন টাউনে পৌঁছে গেলাম। আপনাদেরও একটু খুঁজতে হবে, ডেকান জিমখানার বিশাল ক্রিকেট মাঠের উল্টোদিকে একটা ছোট্ট প্লাজার একতলায় এই রেস্তোঁরা। গলির দুপাশে দুটো ঘুপচি ঘর, একটায় রান্না আর ক্যাশ কাউন্টার, অন্যটায় সাকুল্যে চারটি টেবল আর সরু সিঁড়ি দিয়ে যদি দেড়তলায় উঠতে পারেন, সেখানে আরো দুটি টেবল।
রেস্তোঁরার ব্যস্ততা অনুযায়ী বসার জায়গা খুবই কম। কর্তৃপক্ষ আশেপাশে আরো একটা ঘর নিলে পারেন। টপ ইন টাউনের হর্তাকর্তা সজীব দত্ত নাকি ২০০৪ থেকে এই রেস্তোঁরা চালাচ্ছেন। বেশ মিশুকে, অমায়িক, বিনয়ী লোক। বাঙালী দেখলে নিজেই এটা সেটা নতুন আইটেম খাওয়ান। আমরা যেহেতু ঠিক করেই গেছিলাম কী খাব, বিরিয়ানিটা অর্ডার করা হয়নি সেদিন। এক চামচ করে স্যাম্পেল অবশ্য চেখে দেখেছিলাম, দিব্যি লেগেছিল। সজীব বলেছিলেন ওঁরা নাকি কলকাতা থেকে ঘি আনিয়ে বিরিয়ানি বানান। সে হবে’খন আরেকদিন! কষা মাংসের অপেক্ষায় এক প্লেট চিকেন কাবাব সাবড়ে দিলাম তিনজনে। নামটা ঠিক মনে না পড়লেও কাবাব বেশ সুস্বাদু ছিল – দই আর হালকা মশলার প্রলেপে মোড়া নরম মুর্গীর টুকরো, একেবারে সঠিক আঁচে ঝলসানো, সঙ্গে স্যালাড।
এরপর এলেন চীফ গেস্ট – কালচে লাল কাইয়ে শোওয়ানো মাংসের টুকরো, সঙ্গে পূর্ণিমার চাঁদের মত বিশাল সাইজের পরোটা। মাংসের ওপর ভাসন্ত তেল দেখে মনটা একটু দমে গেলেও খেয়ে বুঝলাম ওটা তেল নয়, মাংসেরই চর্বি। ইয়াব্বড় পরোটা ছিঁড়ে তাতে তুলতুলে এক টুকরো সুসিদ্ধ মাংস পুরে মুখে দিলেই গলে যাবে। নুন ঝাল একেবারে পরিমিত। দু প্লেট কষা নিলে তিন জনের হয়ে যাবে সহজেই। তবে পরোটাগুলি জাম্বো সাইজের হলেও তাতে তেলের পরিমাণ বেশির দিকে হওয়াতে একটু মুখ মেরে যায় খেতে গিয়ে। মাংস নিয়ে প্রথমদিন কোনো অভিযোগ করার মত কিছু পাইনি।
কিন্তু…পরে আরেকদিন রাত্রে গিয়ে ওই একই আইটেম খেয়ে একটু হতাশ হয়েছি। দ্বিতীয়দিন স্বাদে গন্ধে সবেতেই খামতি থাকাতে, ঠিক সেই মনোমত ব্যাপারটা পাইনি। তবে বিরিয়ানিটা এখনও খাওয়া বাকি, তাই আরেকবার অন্তত টপ ইন টাউন যেতে হবে শিগগিরই।
গলদ –
পরোটা অতিরিক্ত তেল চপচপে।
কষা মাংস কোনোদিন নরম, অন্যদিন স্বাদে খামতি, যেন মাংস আলাদা সেদ্ধ করে ঝোলে মেশানো।
মেনুতে মিষ্টির অভাব, বোধহয় ঠিক কারিগর নেই।
জায়গা প্রচন্ড অসংকুলান, আর লাল প্লাস্টিকের প্লেটে ঠিক ভক্তি আসে না।
Zomato কত দিল – 3.3/5
Burrp কত দিল – 4/5
আবার যাব? হ্যাঁ, বিরিয়ানিটা খাওয়া বাকি এখনও।