RSS

পুণে পাঁচালী ৫ – ঝটিকা সফর

08 Aug
পুণে পাঁচালী ৫ – ঝটিকা সফর

লোকে বলে ‘পুণে দারুউউণ জায়গা, দারুউউণ ওয়েদার।’ বিশেষণটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করবেন। সঠিক টোনটা আপনাদের শোনাতে পারলাম না এখানে, যারা বলেছে কথাগুলো, তাদের সাথে আপনাদের আলাপ করিয়ে দেব কখনো। তা সে যাকগে, বর্ষাকালে পুণে সত্যিই মনোরম (যদি আপনি বাড়িতে বসে থাকেন)। যারা রোজ রাস্তাঘাটে খানাখন্দ, কাদাজল আর একটানা ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজে বেরোচ্ছে, তারা হয়ত বর্ষাকে অতটা ভালবাসা দেখাবে না। এ বছর বৃষ্টি দেরীতে হওয়াতে অনেকেই অবশ্য পথ চেয়ে বসেছিলেন একটু শীতলতার জন্যে। আমরাও তাই। তাই বর্ষার শুরুতে পুণের আশেপাশে একটু ঝটিকা সফর মেরে এলাম।

DSC08974যারা হালকা ভূগোল ঘেঁটেছেন তারা জানবেন, পুণে জেলায় প্রচুর টিলা/পাহাড় আছে। জায়গাটা পশ্চিমঘাটের কোলে এবং শিবাজীর ঘাঁটি হওয়ার দরুণ গোটা জেলায় মোট এগারোটি দুর্গ আছে। নিজেদের স্বাস্থ্য, সামর্থ্য, শক্তি, এনথু, ইত্যাদির কথা ভেবে প্রথমে শিবনেরি ফোর্টই যাব ভাবলাম – শিবাজী মহারাজের জন্মস্থান বলে কথা! মারাঠাবাসীর কাছে পুণ্যস্থান এই দুর্গ, এর ভেতরে একটি মন্দিরও আছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মালশেজ ঘাট যাওয়া, রাস্তায় পড়বে শিবনেরি, অর্থাৎ রথও দেখা কলাও বেচা হবে। প্রসঙ্গত জানাই, যারা পুণেতে একটা গোটা বছর থেকে যান, তারা বর্ষাকালে এই অজস্র ঘাটের মধ্যে কোনো একটাতে অন্তত বেড়াতে যান। অবোধ বাঙালি এদিকে ঘাট শুনেই আগে শ্মশানের তুলনা টানেন, যার যেদিকে নজর আর কী! তা আমরাও বোঁচকা-বুঁচকি গুছিয়ে এক শনিবার সকালে বেরিয়ে পড়লাম। একটি গাড়ি, পাঁচজন মানুষ, দুটি ব্যাগ ভর্তি খাবার-জল-চটি-ছাতা ওই আর কী।

ছোটবেলার পিকনিকের অভ্যেসটা ঝালিয়ে নেওয়ার জন্যে সেই পুরাতন রীতি অনুযায়ী আদি অকৃত্রিম চিকেন স্যান্ডউইচ, ডিমসেদ্ধ, মিষ্টি, কেক-বিস্কুট নিয়ে নিলাম সঙ্গে। মেঘলা দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি (গাড়ির) মাথায় নিয়ে ‘জয় শিবাজী’ বলে  রওনা দিলাম। গন্তব্য ১১৫ কিমি দূরে।

DSC08977

রাস্তায় কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা না ঘটলেও বন্ধুবর ও বন্ধুবৌ-এর ফচকেমির দৌলতে সময়টা ভালই কাটল। শিবনেরি পৌঁছবার ঠিক আগে পাহাড়ি রাস্তায় এঁকেবেঁকে ওঠা ভারী সুন্দর। এ বছরের শুরুটা খরা দিয়ে হওয়াতে পাহাড়ের আসল সবুজ রূপটা ঠিক ধরতে পারলাম না। শিবনেরি পৌঁছে চক্ষু টোটাল চড়কগাছ! দুর্গের মাথায় চড়তে হবে ৪০৯টি সিঁড়ি ভেঙে। বন্ধুবৌ এবং আমি পায়ের ব্যাথার দোহাই দিয়ে কাটাতে চাইলেও বাকিরা ঘেঁটি ধরে নিয়ে গেল। দিনটা খুব সুন্দর আর আরামদায়ক হওয়াতে অতগুলো সিঁড়ি কিন্তু খুব একটা গায়ে লাগেনি। ছবি দেখলে বুঝবেন শিবনেরি বেশ দুর্গ(ম)। ১৬৩০ সনে শিবাজীর জন্মের আগে তাঁর বাবা শাহজী ভোঁসলে গোটা পরিবারকে এই দুর্গে নিয়ে আসেন শত্রুপক্ষের থেকে বাঁচাতে। বন্ধুবৌ-এর মতে, গর্ভবতী জীজাবাঈ যদি সত্যিই এতগুলো সিঁড়ি ভেঙে থাকেন, তাহলে মাঝপথেই তাঁর প্রসব হয়ে যাওয়া উচিত! আমরা মোটামুটি দুর্গের চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছে ক্ষান্ত দিলাম, কারণ মালশেজ যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। ওপর থেকে চারিদিকের দৃশ্যাবলী যে না দেখবে সে নিতান্তই মিস করবে। দূরে মেঘে ঢাকা ধোঁয়া ধোঁয়া পাহাড়ের সারি, নীচে চৌকোনো সবুজ টুকরো ক্ষেত আর রূপোলী ফিতের মত রাস্তা – এসব দেখে খাটনি গায়ে লাগে না মশাই!

DSC08999

শিবনেরি থেকে বেরোলাম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। রাস্তায় একমাত্র ‘এসি/নন এসি’ রেস্তোঁরায় খেতে ঢুকলাম। পাহাড়ের একদম কোলে হোটেল আনন্দ আমাদের বড়ই আনন্দ দিল। খাবার বেশ ভাল, আমরা আর হোটেলের কর্মচারীরা বাদে একটিও জনমনিষ্যি নেই। দারুণ একটা বাগান আর চারিদিকে সবুজ মিলিয়ে জনশূন্য জায়গা আন্দাজে দারুণ হোটেল। ‘ফুডিং’ ছাড়া সেখানে লজিংও নাকি আছে। আমরা খেয়ে, আড্ডা মেরে, ফ্রেশ হয়ে আবার রওনা দিলাম। গন্তব্য ৩০ কিমি দূরে। পথে চূড়ান্ত বৃষ্টিতে পাহাড়ী রাস্তায় উঠতে দুর্দান্ত লাগছিল। দু’ফুট দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না।

DSC09032

দূর থেকে পিম্পলেগাঁও-জগা ড্যামকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমরা সোজা মালশেজের দিকে এগিয়ে চললাম। চারিদিক বৃষ্টির চাদরে পরিবৃত, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল আমরা ছাড়া গোটা রাস্তায় আর কেউ নেই। তারপর উল্টোদিক থেকে হুউশ করে আসা এক ঝলক আলো আর লাল-সবুজ-নীল-কালো গাড়ির ছায়া দেখে একটু আশ্বস্ত হচ্ছিলাম। ম্যাপ দেখতে দেখতে পাহাড়ের প্রায় কোলে উঠে বেশ দিশাহারা লাগছিল। রিসর্ট ছাড়িয়ে বাঁশের ছাউনির তলায় ভুট্টাওয়ালা আর এক গন্ডা পুলিশ দেখে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা জিগ্যেস করলাম। পুলিশরা বলল এ বছর বৃষ্টি হয়নি বলে মালশেজের বিখ্যাত জলপ্রপাতগুলো তৈরি হয়নি তখনো। আরো এক কিলোমিটার পরে ধ্বসের চেতাবনি দিয়ে তারা আবার গুটিসুটি মেরে বসল। আমরা সাহস করে আরেকটু এগোলাম, দেখলাম সত্যিই পাথরের চাঙড় পড়ে আছে রাস্তায়, এক ছোট্ট শনিমন্দিরের বাইরে পুলিশরা দাঁড়িয়ে গুলতানি করছে।

বেশ খানিকটা ভয় নিয়ে মালশেজকে এক চক্কর দিয়ে আমরা একটু নেমে, হু-হু ঠান্ডায় ভিজে, গরম সেঁকা ভুট্টা খেয়ে আবার ফিরতি রাস্তা ধরলাম। মালশেজ ঘাটে যাতায়াতের রাস্তাই দেখার মত, বৃষ্টির চোটে আমরা অবশ্য মেইন পয়েন্টগুলোতে কিছু দেখতে পাইনি। তবে সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা ছিল বটে। গন্তব্যের চেয়েও সফরকে বেশি গুরুত্ব কেন দেওয়া হয়, এই সফরেই সেটা হাড়ে হাড়ে মালুম পেলাম। পুণের আশেপাশে যারা বাস করেন বা বর্ষাকালে যদি ঘুরতে আসেন, মালশেজ ও শিবনেরি অবশ্যই যাবেন। বহু বহুদিন মনে থাকবে এই অভিজ্ঞতা।

DSC09056

 
2 Comments

Posted by on August 8, 2014 in পুণে পাঁচালী

 

Tags: , , , , , , , ,

2 responses to “পুণে পাঁচালী ৫ – ঝটিকা সফর

  1. Maniparna Sengupta Majumder

    August 8, 2014 at 7:57 PM

    ছবিগুলো দিব্যি হয়েছে…আর ও ই দুর্গের সিঁড়িগুলোও হেব্বি খাড়া খাড়া মাইরি 😦 কোলাবা দুর্গে গিয়ে হাড়ে হাড়ে মালুম পেয়েছি… এটিও শিবাজীর…

     
  2. Anusia

    October 25, 2014 at 12:48 PM

    ki darun chibi tulecho tumi. Besesh kore sesh chob ta. Khub sundar jayga.

     

Leave a comment

 
The Ramblings of Don

Just my ramblings..... and sometimes my nostalgic memories!

Book Reviews by Satabdi

Candid opinions on books I read

photographias

photography and life

VR & G

Vigorous Radiant & Glowing

যযাতির ঝুলি | বাংলা ব্লগ | Jojatir Jhuli | Bangla Blog

বাংলা কবিতা, বাংলা গদ্য.. মুচমুচে, খাস্তা, অনবদ্য। ছুটির দুপুরে হোক না যোগ.. যযাতির গল্প, ছড়া, ব্লগ।।

feeble Lines

- By Adarsh

Natasha Ahmed

Author at Indireads

জীবনের আয়না

কিছু এলোমেলো ভাবনাচিন্তা

ব্লগম ব্লগম পায়রা

এটা-সেটা লেখা-দেখা...কখনো আনমনে কখনো সযতনে, টুকিটাকি আঁকিবুঁকি...সাদা-কালো সোজা বাঁকা

TRANSLATIONS: ARUNAVA SINHA

Bengali-to-English, English-to-Bengali literary translations

Cutting the Chai

India's original potpourri blog. Since 2005. By Soumyadip Choudhury

সাড়ে বত্রিশ ভাজা

একটি বাংলা ব্লগ

MySay.in | Political Cartoons and Social Views

Funny Cartoon Jokes on Latest News and Current Affairs.

Of Paneer, Pulao and Pune

Observations | Stories | Opinions

A Bookworm's Musing

Reading the world, one book at a time!

SpiceArt

"আমার চতুর্পাশে সব কিছু যায় আসে, আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা..."

Re.lexi.fication

Global structures. Local colour.

Abhishek's blog অভিষেকের ব্লগ

"আমার চতুর্পাশে সব কিছু যায় আসে, আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা..."

Calcutta Chromosome

"আমার চতুর্পাশে সব কিছু যায় আসে, আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা..."

Bookish Indulgences

"আমার চতুর্পাশে সব কিছু যায় আসে, আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা..."

monalisadesign

Monalisa's creations

of spices and pisces

food and the history behind it.