c/o স্যার
ডিটেলঃ
ভাষা – বাংলা, রিলিজ তারিখ –২৮শে জুন২০১৩, দৈর্ঘ্য – ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট, ছবি – রঙীন, ওয়েবসাইট – C/O স্যার, পরিচালনা ও চিত্রনাট্য –কৌশিক গাঙ্গুলী, সঙ্গীত –রাজা নারায়ণ দেব
অভিনয়ে– শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, রাইমা সেন, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, সব্যসাচী চক্রবর্তী, অরুণ মুখার্জী, কৌশিক গাঙ্গুলী।
সমালোচনাঃ কৌশিক গাঙ্গুলীর ছবি দেখার জন্যে আজকাল উৎসুক হয়ে বসে থাকি। শোনা যাচ্ছে টলিউডে এখন তিনি, কমলেশ্বর মুখার্জী এবং সৃজিত মুখার্জী – এই তিনজনেই নাকি সবচেয়ে গুণগ্রাহী, চিত্তাকর্ষক এবং বুদ্ধিদীপ্ত ছবি বানাচ্ছেন। বাকি দুজনকে নিয়ে আলোচনা নাহয় তাঁদের স্ব–স্ব ছবির ক্ষেত্রে করব। আপাতত কথা হোক C/O স্যার–এর। কী ভেবে দেখতে বসলাম? ‘থ্রিলার‘ এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। বব বিশ্বাস হিসেবে তাঁর অভিনয়ের পর কি আর এই ছবি ছাড়া যায়? উপরি পাওনা ছিল একটা ভাল প্লটের আভাস।
শুরুর দৃশ্য থেকেই পরিচালক এবং সিনেমাটোগ্রাফারকে কুর্ণিশ, শাশ্বতর চাঁচাছোলা মুখ সামনের চেয়েও বেশি সাইড অ্যাঙ্গল থেকে দুর্দান্তভাবে শুট করার জন্যে। ফায়ারপ্লেসের পটভূমিকায় কালো চশমা পরে কানে ফোন ধরা শাশ্বতর শট অসাধারণ। গল্পের শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয় তিনি শিক্ষক জয়ব্রত রে, রায় নন। পাহাড়ের বয়েজ স্কুল, তার মধ্যে দারুণ সুন্দর এক কটেজ, ঝকঝকে দৃশ্যাবলী আপনাকে ছবিটা দেখতে বেশ আগ্রহী করে তুলবে। থ্রিলারের আবহ তৈরি করা যতটা সহজ, সেটাকে বজায় রাখা ততটাই কঠিন। হেডমাস্টার সব্যসাচী এবং শিক্ষিকা সুদীপ্তার ভার্বাল এনকাউন্টারের দৃশ্যটি যারপরনাই ভাল। গল্পে রাইমা সেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাতেই আছেন প্রথম থেকে, যার তুলনায় ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের রোল বেশ ছোট। সেটা অবশ্য আমাকে বেশ স্বস্তি দিয়েছে। ভদ্রলোককে উকিলের ভূমিকায় ঠিক বিশ্বাসযোগ্য লাগেনি। কলকাতায় সিক্স প্যাক ওয়ালা উকিল আমি দেখিনি আজ অব্দি, বিশ্বাস করুন। কেউ কেউ নিশ্চয়ই আছেন যাঁরা নিয়মিত শরীরের যত্ন নেন, কিন্তু অসীম ধৈর্য্য নিয়ে সিক্স প্যাক বানানোর মত সময় কি কমবয়সী খ্যাতিমান উকিলদের থাকে? কে জানে, থাকে হয়ত আজকাল। তবে প্রতিটি ছবিতে এই ভদ্রলোকের খালি গায়ে মাসল দেখানোতে আমি অন্তত ক্লান্ত হয়ে গেছি।
ছবির প্রসঙ্গে ফিরে বলি, শুধু শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের জন্যে এই ছবিটি দেখুন। আর কোনো কারণ আপনার না থাকলেও চলবে, আমার মত। ভদ্রলোক এক কথায় অতুলনীয়। দ্য টেলিগ্রাফের সমালোচনায় দেখলাম বরুণ চন্দ লিখেছেন, ‘He has stopped acting. He is Jayabroto Ray.’ পুরোপুরি যথার্থ। ছবিতে একবারের জন্যেও মনে হয়নি তিনি অভিনয় করছেন, একবারের জন্যেও মনে হয়নি তিনি অন্ধ নন। হাঁটাচলা থেকে তাকানো এবং ডায়লগ ডেলিভারি অসামান্য। রাইমা সেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ অভিনয় এবং ট্যাঁশ উচ্চারণ নিয়ে চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে গেছেন। সুদীপ্তা চক্রবর্তী কেন যে আরো কাজ পান না, খোদায় জানে। মাঝারি রোলে খুব সুন্দর অভিনয় করেছেন। কৌশিক গাঙ্গুলী নিজেও একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়া উপরি পাওনা অরুণ মুখার্জীর উপস্থিতি। ছবির প্রথম ভাগ দেখার ক্ষিদেকে আরো বাড়িয়ে দিলেও দ্বিতীয় ভাগ বেশ হতাশ করে। বড্ড হুড়োহুড়ি লেগে যায় যেন শেষ অব্দি পৌঁছতে। আর শেষটাও ঠিক জমল না। আরেকটু বেশি, আরেকটু ভাল কিছু আশা করেছিলাম।
ছবির আবহ সঙ্গীত একটু উচ্চগ্রামের, অনেক দৃশ্যেই যথাযথ, কিন্তু কিছু দৃশ্যে বাহুল্য মনে হল। গানগুলি অ্যালবামে শুনতে দারুণ লাগে, কিন্তু ছবিতে প্রতিটি গানের সেরকম দরকার ছিল না হয়ত। থ্রিলারের মেজাজটা কোথাও একটু মার খেয়ে যায়, দর্শক অধৈর্য্য হয়ে পড়েন। অন্তে ঠিক মিলল না বলে মনটা খুঁতখুঁত করছে, কিন্তু এ ছাড়া এটি একটি টানটান উত্তেজক থ্রিলার, অনবদ্য অভিনয়ে নিয়ে (ইন্দ্রনীল বাদে)। শাশ্বতকে আবারও সেলাম।
আমি কত দিলামঃ ৩.৭৫/৫ (3.75/5)