ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে ঐশী দেখল বিকেল পাঁচটা বাজে। এক্ষুণি গৌরবের আসার সময় হয়ে যাবে। আজ বুধবার। গত কয়েক মাস ধরেই এই সময়ে আসছে গৌরব। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই কাজ সেরে চলে যায় সে। ঐশী খুব বেশি সেজে থাকে না অবশ্য, শিফনের শাড়িই তার পছন্দ, ফস করে একটানে খুলে ফেলা যায়। সঙ্গে সরু একচিলতে ফিতের মত ব্রা-কাট ব্লাউজ, যা একটা হুকের ওপর বিপজ্জনকভাবে টিঁকে থাকে কোনোমতে।
ঐশীর স্বামী বিনায়ক এলাকার সাংসদ, সর্বদাই কাজে ব্যস্ত। গুণে হয়ত কয়েক ঘন্টা বাড়িতে থাকে। কাজেই গৌরবের আসা নিয়ে ঐশীর কোনো চাপ হয়না। ব্যায়াম শিক্ষক হিসেবে সে প্রতি বুধবার বিকেলে আসে, সেই এক ঘন্টা বাড়ির চাকরদের দোতলায় ওঠা বারণ। গৌরবের খোঁজ ঐশী পেয়েছিল মিসেস বক্সীর কাছে, তাঁর বাড়িতে একটা পার্টিতে। মিস্টার বক্সী বিনায়কের পার্টির রাজ্য সম্পাদক, মানীগুণী মানুষ। তাঁর স্ত্রী পার্টি থ্রো করলে ঐশীকে যেতেই হয়। মধ্যবয়স্কা মিসেস বক্সীকে চারটে ককটেলের পর একা পেয়ে সে জিজ্ঞ্যেস করেছিল, ‘এত বড় বাড়িতে আপনি একা থাকেন, মানে আপনাদের তো কোনো ইস্যুও নেই, কী করে সময় কাটান?’
মিসেস বক্সী কিঞ্চিৎ চটুল মহিলা। হালকা চোখ টিপে তাকে বলেছিলেন, ‘সময় কাটানোর উপায় তোমাকেও দিতে পারি।’ বলে তাকে গৌরবের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। ঐশী প্রথমে বুঝতে পারেনি ব্যায়াম শিক্ষক দিয়ে সে কী করবে। তার ছিপছিপে তিরিশোর্ধ্ব শরীরে ব্যায়ামের খুব একটা প্রয়োজন নেই। একাকীত্ব কাটাতে গৌরবকে একদিন ডেকেই নিয়েছিল। যে ব্যায়াম সে শিখিয়েছিল, বর্তমানে সেটার বেশ অভাব ঐশীর জীবনে। তাদের সন্তান হওয়ার পর থেকে বিনায়কের কাজের চাপ আরো বেড়ে গেছে, আরো নিরাসক্ত হয়ে গেছে সে। ছেলে হওয়াতে ঐশীর প্রয়োজন বোধহয় ফুরিয়ে এসেছে তার কাছে। যদিও ছেলে ছ’বছরের হতেই তাকে বোর্ডিং স্কুলে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনায়ক নাকি চায় না তার রাজনৈতিক কীর্তিকলাপের প্রভাব ছেলের ওপর পড়ুক।
আজ বুধবার, গৌরবের আসার দিন। লম্বা দোহারা চেহারার কমবয়েসী ছেলেটিকে ঐশী একদিন জিজ্ঞ্যেস করেছিল, ‘আচ্ছা, আপনার আসল নাম কি গৌরব? এই পেশায় কেন এলেন?’ স্বভাবে শান্ত এবং প্রচন্ড মিতভাষী গৌরব বলেছিল, ‘আমার নাম নরেন নস্কর হলে কি আপনার ভাল লাগত, ম্যাডাম? তাছাড়া আমাদের লাইনে আসল নাম বলা বারণ। কাজে কোনো ভুল হলে আপনি বলতে পারেন।’ কাজটা, বলাই বাহুল্য, গৌরব বেশ ভালই শিখে এসেছে। প্রেমের চৌষট্টি কলা জানা পুরুষ যে কত লোভনীয় হতে পারে সেটা ঐশী এই প্রথম জানল। তার প্রতিটি রন্ধ্র জাগিয়ে দিয়ে যায় গৌরব, যাতে সে প্রতি বুধবারের অপেক্ষায় থাকে।
আজ গৌরব যেন আরো বেশি ধৈর্য্যশীল, আরো বেশি চায় সে – দিতে এবং নিতে। ঐশীকে একটু একটু করে জাগিয়ে তুলে, খেলিয়ে খেলিয়ে সে কামনার চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। যে মুহুর্তে ঐশী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না, আবেশে তার চোখ বন্ধ, তার ভেতরে গৌরব – ঠিক সেই মুহুর্তে একটা ছোট্ট ধারালো ছুরি নির্ভুলভাবে তার হৃদপিন্ড ভেদ করে গেল। নিপুণ দক্ষতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলার আগেই গৌরব বেরিয়ে এল ঐশীর ভেতর থেকে। ছুরির বাঁট থেকে আঙুলের ছাপ মুছে ফেলল, তার কাজ শেষ।
ম্যাডামের সঙ্গে অভিনয় করতে শেষের দিকে গৌরবের একটু খারাপই লাগছিল। মহিলা জেনেও গেলেন না যে বিনায়ক বসু, সাংসদ, তাঁর স্বামীই গৌরবকে এই অ্যাসাইনমেন্টটা দিয়েছিলেন। কেন, সেটা সে জানে না অবশ্য।