একটি বিশাল দর্শকভর্তি স্টেডিয়াম। চারিদিকে মানুষের উত্তেজিত কোলাহল আর তার মাঝে কয়েকটি ষাঁড়ের ক্রুদ্ধ গর্জন। সময়টা রোমান সাম্রাজ্যেরই হোক বা আজ, স্পেনে ষাঁড়ের লড়াইয়ের রীতি খুব একটা বদলায়নি। এখনও টিকিট কেটে প্রচুর মানুষ এই ‘খেলা’ দেখতে যান মাদ্রিদে মার্চ থেকে অক্টোবরের প্রত্যেক রবিবারে। কখনও ষাঁড়টি বেঁচে যায় মাতাডোরের খপ্পর থেকে, আবার কখনও তার মৃত্যু হয়। খেলার নিয়মের ডিটেলে না গেলে মোটামুটি সারাংশ এটাই। তা, মৃত্যুর পর এই ষাঁড়গুলির কী গতি হত আগেকার দিনে? স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রেস্তোঁরা তাদের মাংস কিনে নিত। শোনা যায় এই ব্যাপারটা স্পেনের কর্ডোবাতে শুরু হয় এবং তারপর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। আজকাল আর লড়াইয়ের পরে এটা হয় না বোধহয়। তবে ইতিহাসকে অনুসরণ করে যে ঐতিহ্যকে স্পেন ধরে রেখেছে তা হল একটি খাবার – রাবো দে তোরো। ষাঁড়ের (অথবা এখন মোষেরও) লেজের মাংস, আলু এবং রেড ওয়াইন দিয়ে তৈরি এই হালকা ঝোল অসামান্য খেতে।
আমরা মাদ্রিদ পৌঁছেছিলাম গত ডিসেম্বরের এক দুপুরে। খিদেয় পেট চুঁইচুঁই করছিল, ব্রাসেলস এয়ারপোর্টে বসে খাওয়া ব্রেকফাস্ট পেটের কোন কোণায় তলিয়ে গেছে কে জানে। হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে ছুঁচোর কেত্তনে অতিষ্ঠ হয়ে ঠিক করলাম দূরে যাব না লাঞ্চ করতে, হাতের পাঁচ মঙ্গলবার যা রেস্তোঁরা আছে তাতেই ঢুকে পড়ি। হোটেলের ঠিক পাশেই দেখলাম একটি রেস্তোঁরার বাইরে বোর্ড টাঙানো আছে – তেরো ইউরো প্রতিজনে তিন কোর্স সেট মেনু। মুস্কিল হল ওঁরা ইংরাজি একেবারেই বলেন না। আমরা এদিকে অনেক কষ্টে কিঞ্চিৎ ফরাসী রপ্ত করেছি, কিন্তু স্প্যানিশে দৌড় তো ওই ‘ওলা’, ‘বুয়ানোস দিয়াস’ আর ‘গ্রাসিয়াস’ পর্যন্ত। গুগল ভাইপোর দৌলতে মেনু অনুবাদ করে দুজনে আলাদা আলাদা খাবার মিলিয়ে তিন কোর্স দিলাম। এর মধ্যে বেশ ‘হসমুখ লাল’ টাইপের একজন ওয়েটার এসে দুটি কোকা কোলা দিয়ে গেলেন। অর্ডার নেওয়ার সময়ে উনিই মিষ্টি করে শেখালেন কী করে ‘গ্রাসিয়াস’-এর সঠিক উচ্চারণ করতে হয়। খাবারে স্টার্টারে এল আমার জন্যে চালের সিমাই আর কাবলি ছোলা দিয়ে নিরমিষ স্যুপ, আর উল্টোদিকে বেকড এডামামে বীনসের ওপর ডিমের পোচ আর পাতলা ইবেরিকো হ্যাম। মেইন কোর্সে দুজনের জন্যেই রাবো দে তোরো – সেই প্রথমবার খেলাম আর দুর্দান্ত লাগল। বেশ রবিবারের মাংসের ঝোলের মত হালকা অথচ ফ্লেভারে কোনও খামতি নেই। শেষ পাতে ছিল আমার জন্যে ক্রেমা কন নাটা – গলানো চকলেট দিয়ে ভ্যানিলা ক্রীম আর উল্টোদিকে এল এক স্কুপ লেবুর সরবেটের সঙ্গে কমলার কোয়া। এতেই আমরা নড়তে পারছিলাম না, কিন্তু পেরুর বাসিন্দা হসমুখ ভাই ছাড়তে চাইলেন না। দুটি শট গ্লাসে ঢেলে দিলেন একরকম লোকাল পানীয়, যা নাকি হজমে সাহায্য করে। নির্দ্বিধায় খেলাম সেই ঝাঁজালো মিষ্টি শট, কারণ হজমের সত্যিই দরকার ছিল আমাদের। বলাই বাহুল্য যে এত খেয়ে একটু বিশ্রাম নিতে হয়েছিল হোটেলে ফিরে গিয়ে।