এই আলোচনা লেখার জন্যে কেউ আমাকে একটাও টাকা/ডলার/পাউন্ড/বিটকয়েন দেয়নি। সিনেমা বোদ্ধা/আঁতেল নই, শুধুমাত্র দর্শক হিসেবে বক্তব্য পেশ করছি।
ডিটেলঃ
ভাষা – বাংলা, রিলিজ তারিখ – ১২ই অগাস্ট ২০১৬, দৈর্ঘ্য – ১ ঘন্টা ৫৭ মিনিট, ছবি – রঙীন, সঙ্গীত – বিক্রম ঘোষ, চিত্রনাট্য/পরিচালনা – অরিন্দম শীল, সম্পাদনা – সুজয় দত্ত রায়, মূল গল্প – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অভিনয়ে – শাশ্বত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য, শুভ্রজিত, গৌরব, পায়েল সরকার, রিয়া বণিক, জয়া আহসান, উষসী সেনগুপ্ত, অরুণিমা ঘোষ।
আলোচনাঃ
এবার শবর বানানোর জন্যে অরিন্দম শীলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ছিলাম কারণ উনি শবরকে বড় পর্দায় আনলেন। বাংলা সাহিত্যে প্রচুর গোয়েন্দা থাকলেও, সিনেমাতে ফেলুদা-ব্যোমকেশ ছাড়া কেউই কল্কে পাননি। তিনরকমের ফেলুদা আর চার-পাঁচরকমের ব্যোমকেশকে দেখে গত বছর থেকেই মনে হচ্ছিল আর কি কোনো ক্যারিশম্যাটিক গোয়েন্দার কথা বাংলা সাহিত্যিকরা লিখে যাননি যাদের বড় পর্দায় দেখেও ভাল লাগবে? শবর সে খামতি খুব ভালভাবে পূরণ করেছেন। এবার শবর আর ঈগলের চোখ – দুটি ছবিরই মূল গল্প পড়েছি – ঋণ ও ঈগলের চোখ। সমস্য হচ্ছে, ঋণ একটি চমৎকার উপন্যাস হওয়াতে পরিচালকের কাজটা বোধহয় একটু সহজ হয়ে দিয়েছিল। সে তুলনায় ঈগলের চোখ উপন্যাস নয়, বড়গল্প। এবং তার গুণগত মান একটু কমা। মূল গল্পটা কিছুটা পড়লে পাঠক চট করে ধরে ফেলবেন অপরাধী কে। ছবিটা দেখেও সেটা আন্দাজ করতে কারুর খুব একটা অসুবিধে হবে না। এখানেই কিস্তিমাত করেছেন অরিন্দম শীল। একটা সাধারণ গল্পের মান বেশ খানিকটা বাড়িয়ে তাকে একটা ভাল ছবিতে পরিণত করেছেন। মূল গল্পটা পুরোটাই প্রায় সংলাপে এগোয়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অসামান্য লেখনীতে তরতরিয়ে এগোলেও বাঁধুনিতে একটু আলগা। যখন শুনলাম এই গল্পটা নিয়ে ছবি হচ্ছে, বেশ অবাকই হয়েছিলাম। শবরের যে গুটিকয় গল্প আছে, তার মধ্যে ঈগলের চোখের চেয়ে ভাল গল্পও আছে।
ছবির শুরুটা দিব্যি, শবর আর নন্দ যেখানে অপরাধীদের ধাওয়া করেন, সঙ্গে বিক্রম ঘোষের আবহ সঙ্গীত। এরপর আসে খুন-তদন্ত-জেরা ইত্যাদি। বিষাণ রায় লোধাসূলি থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁর স্ত্রী শিবাঙ্গীর বন্ধু ও বিজনেস পার্টনার নন্দিনী সেন খুন হয়ে পড়ে আছেন, স্ত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ও আলমারি থেকে লাখখানেকের বেশি টাকা লোপাট। শবর দাশগুপ্ত তদন্ত শুরু করে জানতে পারেন বিষাণের একটা অতীত আছে, এবং বর্তমানে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন। ওদিকে নন্দিনী আর আশ্রিতা জাহ্ণবী দুজনেই বিষাণের প্রতি আকৃষ্ট। নন্দর প্রশ্নের উত্তরে শবর একজায়গায় বলেন যে বিষাণ একধরণের পুরুষ যাদের দেখলেই মেয়েরা পঙ্গপালের মত ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়। এই চূড়ান্ত সূপুরুষ অথচ স্বেচ্ছাচারী, স্বল্পভাষী, মদ্যপ বিষাণের চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য ফাটিয়ে অভিনয় অথবা না-অভিনয় করেছেন। মূল গল্পটা পুরোটাই প্রায় শবর আর বিষাণের কথোপকথনের ওপর, ছবিতে অবশ্য অন্যান্য চরিত্ররাও কিঞ্চিৎ প্রাধান্য পায়।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কিছুই বলার নেই, থাকে না। তিনি ব্যোমকেশের অজিত হতে পারেন, কিন্তু তারও আগে তিনি নিজেকে শবর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। তবে এবার শবরের চেয়ে ঈগলের চোখে তাঁকে শবর হিসেবে একটু ক্লান্ত লেগেছে। এই ছবিতে শবর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান, ক্রাইম সিনে অপরাধীদের মধ্যে নিজেকে দেখতে পান, কাজ ছাড়া তিনি কিছুই করেন না। ডাক্তার তাঁকে বলেন ছুটি নিতে। এই ব্যাপারটা দেখে মনে হল পরিচালক কি তাহলে শবরকে এবার ছুটিতে পাঠিয়ে দেবেন?
অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য থিয়েটার থেকে সিনেমায় পা রাখলেন। এবং আমার মতে তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। বিষাণের চরিত্রে তাঁর চেয়ে ভাল কেউ করতে পারত বলে মনে হয় না। যে বেপরোয়া অথচ নরম, স্বেচ্ছাচারী অথচ সাবধানী, উদাসীন অথচ কেয়ারিং। সংলাপ বলার সময় গলার মডিউলেশন আরেকটু হেরফের করলেই মোটামুটি পরের ছবি থেকে বাজিমাত করে দেবেন। অবশ্য অনির্বাণ শুধু চোখ দিয়ে বেশ খানিকটা অভিনয় করারও প্রতিভা রাখেন মনে হয়। আশা করি অন্যান্য পরিচালকরাও তাঁর দিকে একটু খেয়াল করবেন। বাকি চরিত্রে জয়া আহসান, পায়েল সরকার, রিয়া বণিক, শুভ্রজিত দত্ত, গৌরব চক্রবর্তী – সবাই যথাযথ। সব মিলিয়ে ঈগলের চোখ দিব্যি ভাল লেগেছে। শবরকে একটু বয়স্ক আর ক্লান্ত লেগেছে অবশ্য আমার। এবার শবরে তিনি অনেক agile ছিলেন।
শবর সিরিজ বন্ধ করবেন না যেন, অরিন্দমবাবু।
আমি কত দিলাম – 4/5 (পাঁচে চার)
Anindya Sundar Basu
September 10, 2016 at 12:56 AM
Great effort . I wanted to comment in Bengali only but lazy to install abhro. Chaliye jaoo
PRB
September 10, 2016 at 4:04 PM
dhonyobaad!
AMIT DAS
September 12, 2016 at 8:24 PM
SUPER LEKHA