চারশো ছেষট্টি কিলোমিটার (~ দশ ঘন্টা) গাড়ি চালিয়ে পুণে থেকে গোয়া যাওয়ার কথা শুনে অনেকেই আমাদের গোঁয়ার ভেবেছিল, বিশেষত বাড়ির লোক। অতক্ষণ কী করে চালাবি? (যেভাবে চালায়, স্টিয়ারিং ধরে), গা হাত পা ব্যাথা হবে (ব্রেক নিয়ে চালালে হবে না), শরীর খারাপ হয়ে যাবে (কেন, গাড়ির ভেতর রোদ বৃষ্টি কিছুই নেই, দিব্যি এসি চলে), গিয়ে ঘোরার এনার্জি থাকবে না (একবেলা রেস্ট নেওয়ার প্ল্যান আছে), ইত্যাদি যুক্তিমালা সাজাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অগত্যা তাঁরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। গোঁয়ার্তুমির কাছে হেরে গিয়ে বোধহয় ঠাকুরঘরে ইষ্টনাম জপ করছিলেন। গোঁয়াররা এদিকে ষষ্ঠীর দিন ঠাকুরের বোধন, বরণ, অস্ত্রদান সব দর্শন করে ভাল করে চপ-এগরোল খেয়ে এনার্জি সঞ্চয় করে বেরোনোর জন্যে তৈরি হচ্ছিল।
ভোর চারটেয় বেরোতে হবে, তবেই ব্রেক-ট্রেক মিলিয়ে দুপুর দুটো নাগার গোয়ার হোটেলে পৌঁছনো যাবে। রোজকার মত অ্যালার্মকে স্নুজে না দিয়ে দুজনেই তড়াক করে উঠে পড়লাম। প্রাত্যঃকৃত্য সেরে খাবার-জল-ওষুধ গুছিয়ে জয় মা বলে চারটে কুড়ি নাগাদ রওনা দিলাম। পুণেতে ভোরের আলো ফোটে সাড়ে ছটা নাগাদ, অতএব প্রায় দু ঘন্টা অন্ধকারে চালাতে হবে। কত্তামশাই চোখ-টোখ কচলে মুখে চিউয়িং গাম দিয়ে চালানো শুরু করলেন। পুণে-সাতারা হাইওয়েতে প্রথম একশো কিলোমিটার রাস্তা বেশ বাজে, এদিক ওদিক খোঁড়াখুঁড়ি আর ডাইভার্শানে ভর্তি। তার ওপর গাঁক গাঁক করে প্রচুর ট্রাক চলছে। দু একবার মনে সন্দেহ এসেছিল, যে পুরো রাস্তাটা এরকম খারাপ থাকলে তো সত্যিই শরীর খারাপ হয়ে যাবে পৌঁছনো অব্দি। অন্ধকারে বুক দুরুদুরু করে বেশ কিছুটা পশ্চিম ঘাটের পাহাড়ি প্যাঁচানো রাস্তা পেরোনো গেল ট্রাকের পেছন পেছন। পাহাড় থেকে সুরুর বলে জায়গাটায় নামতেই মেঘলাচ্ছন্ন এক অপূর্ব সূর্যোদয় দেখলাম।