শোনা যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কলকাতায় মেসে থাকতেন, পাইস হোটেলে খেতেন রোজ দুপুরে। পেটচুক্তিতে পেট ভরে ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি, মাছ, চাটনি। সেইসব হোটেলের রান্না হত অতুলনীয়, একেবারে বাড়ির মত বা তার চেয়েও ভাল। বিভিন্ন জেলা থেকে যাঁরা চাকরিসূত্রে কলকাতায় আসতেন, কারুর খাওয়ার অসুবিধে হত না হপ্তায় পাঁচটা দিন, তারপর শনিবারে তাঁরা বাড়ি যেতেন পরিবারের কাছে। ধীরে ধীরে রেস্তোঁরার উদ্ভাবন হওয়াতে পাইস হোটেলের গুরুত্ব কমে আসে শহরে। মধ্যবিত্ত বাবুদের মনে হতে থাকে হোটেলগুলো অপরিষ্কার, বসার জায়গা অপরিসর, সেখানে খেতে যাওয়া তাদের স্টেটাসে ডাউনমার্কেট। স্বাধীনতার পর ডালহৌসির অফিস পাড়ায় আস্তে আস্তে বসতে থাকে পাঁউরুটি-চিকেন স্টু এর স্টল, কাটা ফলের বিস্তৃত ঠেলাগাড়ি, লুচি-ঘুগনির ছোট্ট দোকান। পাইস হোটেলের গুরুত্ব কমতে কমতে এসে ঠেকে শুধু ট্রাক ড্রাইভার, বাসের কন্ডাক্টর, জয়নগর বা পিয়ালী থেকে কলকাতায় কাজের খোঁজে আসা সেইসব তরুণদের জন্যে।

নিরামিষ থালিঃ ভাত, ডাল, আলু পোস্ত, আলু ফুলকপির তরকারি, আমের চাটনি (ছবিতে নেই)
তা বলে পাইস হোটেল কি একেবারে উঠে গেছে? না। খাস কলকাতায় এখনও পাবেন পাইস হোটেল – রুবি হসপিটালের থেকে নারকেলবাগান বাস স্টপের মাঝের ফুটপাথে ত্রিপল টাঙানো উনুন বসানো দোকান, যাদবপুর থানা থেকে আনওয়ার শাহ রোড কানেক্টরের মোড়ে, বা শিয়ালদার আশেপাশে। যখন আপনি রুবির মোড়ের দিকে ফুটপাথ ধরে হেঁটে যাবেন, গনগনে গ্রীষ্মের বিকেলে বা কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে অফিসের বাস ধরার জন্যে, পাতলা মুসুর ডালে সম্বার দেওয়ার গন্ধ বা রুই মাছ ভাজার সুবাসে ম ম করবে বাস স্টপটা আর আপনার ক্ষিদে পেয়ে যাবেই। যেসব তুচ্ছ দৈনন্দিন ঘ্রাণ আপনি বাড়িতে থাকলে খেয়ালই করেন না, সেগুলো হঠাৎ করে পাইস হোটেল আপনাকে মনে করিয়ে দেবে। স্টিলের থালায় কমদামী মোটা চালের ভাত, পেঁয়াজ পাঁচফোড়ন আর কাঁচালঙ্কা ঘষে দেওয়া মুসুর ডাল, ঝুরিঝুরি আলু ভাজা আর পটল দিয়ে টাটকা মাছের ঝোলের যে কী মহিমা সেটা আপনি নতুন করে জানবেন। আজকালকার হাল ফ্যাশানের ক্যাফে কাম বেকারিতে ঢুকলেই ফ্রেশলি বেকড ব্রেড বা কাপকেকের যে গন্ধ ভেসে আসে, তার থেকে বৌদির দোকানের ডাল ভাত কোনো অংশে কম মনে হবে না।

ছবি নিজস্ব
এত লম্বা গৌরচন্দ্রিকার পর এবার আসল কথায় আসি। প্রবাসে থেকে যে কটা বাঙালি ‘রেস্ট্যুরেন্ট’-এ গেছি, তার মধ্যে দু-একটিকে সত্যিই পাইস হোটেল মনে হয়েছে। অবশ্যই সেগুলো ফুটপাথে ছাউনি ঘেরা কাঠের বেঞ্চ এর উপর স্টিলের বা কলাই করা থালায় খাবার পরিবেশন করে না। তার চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই মানে এবং দামে উন্নত। পাইস হোটেল বলে তাদের কিন্তু কোনো অসম্মান করতে চাইছি না, বরঞ্চ পাইস হোটেলের মতই ভাল ঘরোয়া খাবার এবং পরিবেশনে যে আন্তরিকতা তাদের আছে, তার কথা বলছি। পুণের পিম্পলে সৌদাগরের ক্যালকাটা প্লাস সেই বিভাগে পড়ে। কাউন্টারে বসেন বয়স্ক কাকু, হোম ডেলিভারি করতে যান জামাইদা এবং পুজোর সময় কাকুর স্টল সামলান তাঁর ছেলে।
ক্যালকাটা প্লাস, পিম্পলে সৌদাগর
ঠিকানা – গীতাই মার্কেট, শিভার চৌক, পিম্পলে সৌদাগর, পুণে
ফোন – +৯১-৮৭৯৬২০৭২১৯
বসে খান | আমিষ | সুরারসে বঞ্চিত | ঘরে আনানো যাবে | পাখা আছে এসি নেই
সময় – দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে তিনটে, সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত এগারোটা