আসলে পুজোর মানে নিয়ে অনেক লেখাজোখা হয়েছে এবং চলছে। যে যার আপন মনের মাধুরী মিশায়ে লিখে গেছে কীভাবে পুজো মানে কাশফুল, শরতের আকাশ, মহালয়া, ঠাকুর দেখা, প্রেম, এগরোল ফুচকা, ইত্যাদি প্রভৃতি। কারওর কাছে দূর্গা পুজো মানে দেবীর আরাধনা, কারওর কাছে শুধুই মজা আর ‘মস্তি।’ বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ হলেও ‘পুজো’ কথাটা মাথায় আসলেই আপামর বাঙালী দূর্গা পুজো বলে হামলে পড়ে।
বছর দশেক আগে জীবনে প্রথমবার পুজোয় বাড়ির বাইরে ছিলাম, তায় আবার বিদেশে। মন মেজাজ সবই প্রকান্ড রকম খারাপ ছিল। কিন্তু সেবারে শুধু বন্ধুদের জন্য পুজোটা অন্যরকম হয়ে উঠেছিল। জনা তিরিশেক তরুণ-তরুণী মিলে যদি কিছু ঠিক করে তাহলে পঙ্গুও গিরি লঙ্ঘন করতে পারবে, একটা পুজোর আয়োজন করা তো জলভাত। ছ ইঞ্চিখানেকের ঠাকুরকে পুজো করেও যে আনন্দটা দেশপ্রিয় পার্ক লেভেলের হতে পারে সেটা এক দশক আগেই প্রমাণ হয়ে গেছে।

দেশ হোক বা বিদেশ, বাঙালী যেখানেই থাকুক, পুজো মানে অনেকের কাছেই অনেক কিছু। কলকাতার পুজো যে তুলনাহীন, সেটা আমি মানলেও অনেকে মানেন না। এরকম অনেক প্রবাসী বন্ধু আছে যারা জীবনে কলকাতার পুজো দেখেনি কিন্তু তাদের নিজের নিজের শহর/এলাকা/হাউজিং ঘিরে পুজোর উন্মাদনা দেখলে অবাক হতে হয়।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: কলকাতা, কাশফুল, দূর্গা পুজো, পুজো, পুণে, মা দূর্গা, শরতকাল, durga puja, kolkata, ma durga, maddox square, pujo, pune
দৃশ্য একঃ
রাত নটা। ক্লোজ আপে একটি মেয়ে, লম্বা দোহারা শ্যামলা চেহারা। পরণে হালকা টপ আর জিনস, গলায় একটা পাতলা স্কার্ফ জড়ানো, কাঁধে মোটামুটি ঢাউস একটা ব্যাগ। কর্পোরেট অফিসের হিমঘর থেকে বেরিয়ে করিডরের লকার রুমের দিকে হাঁটা দিল। ব্যাগ খুলে চাবি খোঁজার মত সময় নেই তার, নিজের কিউবিক্ল থেকে চাবিটা বের করে হাতে নিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়েছে সে। জেলের কয়েদির মত সংখ্যাযুক্ত নিজের লকার খুলে সে অমূল্য জিনিসটি বের করল – স্মার্টফোন। তার কাজের ধরণটাই এমন যে সারাদিন ফোনের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। এদিকে…গত দশ ঘন্টায় কে কে পিং করেছে কে জানে।
ফোনের স্ক্রিনের ক্লোজ আপ। Whatsapp নোটিফিকেশন ১০৯ , মিসড কল ৩, Twitter আইকনে ২১টা নোটিফিকেশন।
মেয়েটিঃ উফফ, এই স্কুলের গ্রুপের জনতা আবার পাগল হয়ে গেছে মনে হয় আজকে। কী করে যে এত সময় পায় কে জানে! আমি শালা এদিকে অফিস মারাচ্ছি সারাদিন।
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা মুঠোয় নিয়ে সে অফিসের বাইরে এল। রিস্টওয়াচে সময়টা দেখল নটা পনেরো। নির্দিষ্ট ক্যাবটি এলে আরো কয়েকজনের সঙ্গে সে খাঁচায় ঢুকে পড়ল। মিনিট পঁচিশের যাত্রার পুরোটাই লাগল তার সব মেসেজ পড়ে ফেলতে। সবগুলোর উত্তর দেওয়া হল না অবশ্য অত কম সময়ে। বাড়ি ঢুকেই সে কাঁধের ঢাউস ব্যাগটা ছুঁড়ে সোফার ওপর ফেলল। ক্যামেরা একটু ঘুরবে সুদৃশ্য ফার্নিশড ফ্ল্যাটের ভেতর। লং এবং ক্লোজ শটে দেখা যাবে মেয়েটির সঙ্গে আরো দুটি মেয়ে থাকে। একজন তার নিজের ঘরে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে, সামনে ল্যাপটপ। আরেকজন লিভিং রুমে সোফায় বসে হাঁ করে টিভি দেখছে, হিন্দি সিরিয়াল।
মেয়েটি নিজের কোটরে ঢুকে পড়ল। এরপরে কয়েকটি ফ্রেম আলাদা আলাদা দেখা যাবে – তিনটি মেয়ে যে যার ঘরে খাবার বেড়ে নিয়ে খাচ্ছে, রান্নাঘরটা মোটামুটি গোছানো, তৃতীয় মেয়েটি খেয়ে উঠে আবার সিরিয়াল দেখছে, দ্বিতীয় মেয়েটি খাবার পর বাকিদের গুডনাইট বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল, সে এখন তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করবে। বয়ফ্রেন্ডের চেহারাটা আমরা এক ঝলক দেখব মেয়েটির ল্যাপটপের স্ক্রিনে, হালকা মোটকা মাঝারি দেখতে একটি দক্ষিণী ছেলে। সে স্ক্রিন থেকে হাতমুখ নেড়ে এদের হাই হেলো করবে।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: অফিস, কলকাতা, টুইটার, নাটক, নাটিকা, প্রবাস, ফেসবুক, Facebook, Twitter, Whatsapp
পুণে পাঁচালীর কয়েকটি কিস্তির পর ভেবেছিলাম কলকাতা কচকচিটা অনেকদিন চালাতে পারব। কিন্তু বিধি বাম (পুণে তো কলকাতার বামেই), তাই পুণে পাঁচালীর কিস্তিই বাড়বে যা দেখছি। কলকাতা কচকচির আরো কয়েক কিস্তি পড়তে পারত, কিন্তু তাতে আমার খিস্তি খাওয়ারই সম্ভাবনা বেশী। কাজেই, তিষ্ঠ পাঠকবর/বউ।
বছরখানেক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশতে থাকার পর কলকাতা মোটামুটি আমাদের মনের সব আর্দ্রতাই শুষে নিয়েছে, সেই বিষতর বিষয়ে বিশদে আর নাই বা বললাম। ভোজরাজের রোল, আড্ডা আর জমজমাট একটা রোডট্রিপ ছাড়া কলকাতায় খুব ভাল কিছু হয়নি। কিন্তু থাক, সেগুলো নাহয় কলকাতা কচকচিতেই আসবে। পুণেতে একই ঘরে দ্বিতীয়বার ঘর করতে এসে দিব্যি লাগছে। সেই চেনা পটিবেশী – আমাদের হাঁটার আওয়াজে যার ঘুম হয় না, সামনের ফ্ল্যাটের বড় বউ বিদেশ থেকে একটা গুটগুটে বাচ্চা নিয়ে ফিরেছে, সেই ব্লগবিশ্বে বিখ্যাত কাজের মাসি আমার, এবং সেই চেনা দোকানপাট আর দোকানি।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: কলকাতা, দুর্গাপুজো, পুজো, পুণে, পুণে পাঁচালী, শারদীয় শুভেচ্ছা, শারদীয়া
(আগের পর্বগুলি এখানে)
কলকাতায় বহুকাল না থাকার দরুণ যেটা ভুলে গেছিলাম সেটা আমাদের ভাষায় ‘চেনা সিন্ড্রোম’। কলকাতা ও শহরতলির লোকেরা যে কোনো কাজে, যে কোনো জায়গায় গিয়ে আগে কোনো ‘চেনা’ লোক খোঁজে। আমি-আপনি হয়ত ‘চেনা’ বলতে বুঝি এরকম কেউ যার নাম-ধাম-ঠিকুজি-কুলুজি জানি, যার সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়, অথবা নিতান্ত আত্মীয়-বন্ধুদের মধ্যে কেউ। বেশ কিছু লোক অপর কিছু লোককে চেনা বলে পাকড়াও করেন, যার সঙ্গে হয়ত তার ছয় ডিগ্রীর চেয়েও বেশি সেপারেশন। সেই থিওরি নিশ্চয়ই আপনারা অনেকে জানেন যে পৃথিবীর যে কোনো দুজনের মধ্যে ‘বন্ধুর বন্ধু’ বা ‘চেনার চেনা’ বেরোতে মাত্র ছয় জন লাগে। অথবা শিবরামের সেই জ্যামিতিক অঙ্ক যেখানে বন্ধুর বন্ধুর বন্ধু নিয়ে বেশ একটা জম্পেশ গল্প ছিল।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: অচেনা, আত্মীয়, আধচেনা, কলকাতা, কলকাতা কচকচি, ক্লাব, চেনা, ছয় ডিগ্রী, বেসরকারি, সরকারি, সিক্স ডিগ্রীস অফ সেপারেশন, হাসপাতাল
(প্রথম পর্ব এখানে)
ইন্টারনেটে বাড়ির বিজ্ঞাপন ধোঁকা দেওয়ার পর আমরা তাদের দ্বারস্থ হলাম যাদের হাতেই এখন এ শহরের চাবিকাঠি। তাদের পোষাকী নাম এজেন্ট অথবা ব্রোকার, ভালবেসে লালদাও বলতে পারেন। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে ইন্টারনেট পোর্টাল – সবাই তাদের খবর রাখে এবং দেয়। আমরাও ‘জয় মা’ বলে একেকটা এলাকা ধরে তাদের শরণাপন্ন হলাম। প্রতিটা জায়গায় ভিন্ন অভিজ্ঞতা হল, সেগুলো এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
রাজারহাট
মাড়োয়ারি বৌদির ফ্ল্যাট থেকে পালানোর পর তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে জাব হয়ে, আমিনিয়ার জঘন্য বিরিয়ানি খেয়ে এক চায়ের দোকানে লালদার খোঁজ করলাম। ভাতঘুম দিয়ে উঠে এক ভদ্রলোক কোনোমতে ফ্ল্যাট দেখাতে রাজি হলেন। যেগুলো আমাদের টার্গেট, সেগুলো আবার ওনার টার্গেটের বাইরে। সবারই এলাকা এবং বাজেট ভাগ করা থাকে, সেটা আমরা জানতাম কিন্তু বুঝতে পারিনি ভালো করে। এনার বাজেটটা আমাদের থেকে কম হওয়াতে বেশ ঘাবড়ে গিয়ে কিছু ভুলভাল ফ্ল্যাট দেখালেন। রাজারহাটের চিনার পার্ক মোড় থেকে বাঁদিকে গেলে জ্যাংড়া এবং হাতিয়াড়া পড়ে। সেখানে আছে লোকনাথ বাবার বিখ্যাত মন্দির। তার পাশের গলিগুলোর নাম লোকনাথ পার্ক। সেই অতীব সরু গলিতে আমাদের গাড়ি ঢুকবে না বলাতেও ভদ্রলোক জোর করে বাড়ি দেখাতে নিয়ে গেলেন। “পাশেই গ্যাসের দোকান, ওদের গাড়ি রোজ ঢুকছে আর আপনাদের গাড়ি ঢুকবে না?” অগত্যা। Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: কচকচি, কলকাতা, চিংড়িহাটা, দালাল, নারকেলবাগান, নিউটাউন, বাড়ি, বাড়িওয়ালা, ভাড়া, মাদুরদহ, রাজডাঙা, রাজারহাট, রাসবিহারী কানেক্টর, রুবি হসপিটাল
‘তারপর? পুণে পাঁচালী তো হয়ে গেল, এরপর কী?’
কদিন আগে অব্দি নিজেকে এই প্রশ্ন করছিলাম। তবে ‘কী’ এর চেয়ে ‘কোথায়’টা বেশি জরুরি ছিল। তার উত্তর পাওয়া মাত্রই কলামের নামটাও পেট থেকে মুখে এসে গেল। পুণের পর কলকাতা হলে পুণে পাঁচালীর পর কলকাতা কচকচিই আসুক নাহয়। দেড় বছরের পুণেবাসে যদি গোটাপাঁচেক পাঁচালী পোস্ট লিখতে পারি, আপাতত অনির্দিষ্টকাল কলকাতাবাসে নিশ্চয়ই অনেক কিছু লিখতে পারব।
পুণে টু কলকাতা। আনন্দ, উত্তেজনা, নিশ্চিন্দি, পেট গুড়গুড় – সবই থাকা উচিত ছিল, বাদ সাধল অবাধ্য ভাইরাল জ্বর, ঠিক পুণে ছাড়ার আগে। ফলে কলকাতা এলাম ধুঁকতে ধুঁকতে। এসেই বাড়িতে কদিন বডি ফেলে দেব ভেবেছিলাম, কিন্তু নতুন বাসা খুঁজতে হবে যে। হাওড়ায় দুরন্ত থেকে নামার প্রায় বারো ঘন্টার মধ্যে আবার ধড়াচূড়ো পরে রেডি হয়ে বেরোলাম। গন্তব্য এমন একটা জায়গা যেখানে জীবনে একবারই গেছি এর আগে – রাজারহাট। পুরনো কলকাতাবাসীরা হয়ত এখনো রাজারহাট শুনে নাক কুঁচকে তাকান, কিন্তু আইটি সেক্টরে কাজ করা জনতার কাছে খুব বেশি অপশন নেই। বেরোনোর আগে ইন্টারনেট দেখে (অ-পশ্চিমবঙ্গীয় অভ্যাস) ফ্ল্যাট মালিকদের খোঁজ করা শুরু করলাম।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: অভিজ্ঞতা, কলকাতা, দালাল, নিউটাউন, পুণে, ফ্ল্যাট, বাসা, বাড়ি, ভাড়া, মালিক, রাজারহাট
ডিটেলঃ
ভাষাঃ বাংলা, রিলিজ তারিখঃ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩, দৈর্ঘ্যঃ ২ ঘন্টা ০৭ মিনিট , ছবিঃ রঙীন, চিত্রনাট্য ও সংলাপঃ ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী ও সুগত সিনহা, সঙ্গীতঃ প্রবুদ্ধ ব্যানার্জী, পরিচালনাঃ ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী
অভিনয়েঃ সোহিনী সরকার, আকাশ অধিকারী, সৌরভ বসাক, ঋত্বিক চক্রবর্তী, দ্বিজেন বন্দোপাধ্যায়

ছবি সৌজন্যেঃ গুগল
সমালোচনাঃ
‘ফড়িং’ ছবিটি নিয়ে এত আলোচনা এবং বিতর্ক হয়েছে, অথচ ইন্টারনেটে কোনো বাংলা ব্লগে এখনো ছবিটির নিয়ে কিছু লেখা নেই। বাংলা ব্লগাররা কি ছবিটিকে ব্রাত্য করেছেন বিতর্কের জন্যে? আমার মত আরো অনেকে নিশ্চয়ই সপ্তাদুয়েক আগে টিভিতে ছবিটি দেখে ফেলেছেন। গ্রীষ্মের গনগনে দুপুরে ঘুরন্ত ফ্যানের হাওয়ার নীচে শুয়েবসে তিনটি ঘন্টা ‘ফড়িং’ দেখে দিব্যি কেটে গেল। না, ছবিটি মাত্র দু’ঘন্টারই, তবে টিভিতে দেখবেন আর বিজ্ঞাপনের মাসুল দেবেন না, তা কি হয়! কাগজে পড়ে জেনেছিলাম ছবিতে আলোচ্য দুটি বিষয় – নবাগতা সোহিনী সরকার ও বয়ঃসন্ধির যৌনতা। তার সঙ্গে যোগ করব অসাধারণ চিত্রগ্রহণ, দারুণ কিছু সংলাপ আর কিশোর অভিনেতা আকাশ অধিকারী।
আকাশ ওরফে ফড়িং থাকে উত্তরবঙ্গে, পড়ে ইশকুলে, মদ্যপ বাবার কাছে মার খায় আর তার মায়ের একটাই হুঙ্কার ঘন ঘন শোনে, “আমি কিন্তু বর্ডার পার করা মাইয়াছেলে।” ফড়িংয়ের খুব কাছের বন্ধু ভগবান। সে মনে মনে যা প্রশ্ন করে, তার মাথার ভেতর ভগবান সব উত্তর সাজিয়ে দেন এক এক করে। প্রথম কয়েকটি সিনে শস্য শ্যামলা উত্তরবঙ্গ দেখে চোখ ভরে গেলে সংলাপে মন দেবেন। চায়ের দোকানে প্রৌঢ়দের আড্ডায় নিমাই ঘোষ দুর্দান্ত। এত ছোট ভুমিকাতেও কী করে ফাটিয়ে দেন সেটাই দেখার মত। ফড়িংয়ের জীবন দিব্যি চলছিল মারধোর-বন্ধুবান্ধব-বয়ঃসন্ধির দুষ্টুমি-নিষিদ্ধ ছবি-ক্লাসে ফেল করা নিয়ে। তার মধ্যে হঠাৎ এলেন ইতিহাসের শিক্ষিকা দোয়েল মিত্র।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: Akash Adhikary, আকাশ অধিকারী, উত্তরবঙ্গ, ঋত্বিক চক্রবর্তী, কলকাতা, কিশোর, দ্বিজেন বন্দোপাধ্যায়, ফড়িং, বয়ঃসন্ধি, রিভিউ, সমালোচনা, সোহিনী সরকার, স্কুল, Bangla Cinema, Movie, Phoring, Review, Ritwik Chakraborty, Sohini Sarkar
না না, আমি ডারউইন সাহেবের মানসপুত্রী নই, বিবর্তন নিয়ে হেজিয়ে আপনাদের সময় নষ্ট করব না। পাতি বক্তব্য হচ্ছে এই – বাঙালী দিন দিন পালটে যাচ্ছে বলে অনেক মানুষ মুষড়ে পড়ছেন। তাদের জন্যে ভেবে বের করলাম কয়েকটা জিনিস যা আজও বাঙালীর জীবনে বিবর্তন থেকে বাদ পড়ে আছে। অর্থাৎ এমন কিছু ব্যাপার যা আজও বাঙালীর আছে আর আশা রাখি চিরকাল থাকবে।
গামছা
কটা বাঙালীকে দেখেছেন যারা গামছা ব্যবহার করে না? চিরন্তন আরামের লাল সবুজ চেক–কাটা কাপড় ছেড়ে গাবদা রোঁয়া ওঠা ভারী তোয়ালেতে কজনই বা স্বস্তিতে থাকেন? উত্তর কলকাতার রাস্তার ধারের কলে স্নানরত থেকে বহুতল ফ্ল্যাটের বারান্দায় শুকোতে দেওয়া গামছার খুব বেশি তফাত নেই। একজন হয়ত বসিরহাটের কুলীন আর অপরজন হাতিবাগান বাজারের সদস্য।

ছবি সৌজন্যেঃ Flickr
একদিকে হয়ত কলের অবিরত গঙ্গাজলে স্নানের পর কাপড় পরে গামছাকে নিংড়ে ফুটপাথের রেলিঙে মেলে দেওয়া হয়, অন্যদিকে অত্যাধুনিক শাওয়ারে ইষদুষ্ণ জল আর সুগন্ধী সাবানের ফেনা আলতো করে মুছে এগারোতলার বারান্দায় মেলা হয়। গামছা আগেও ছিল, এখনো আছে, অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। যতই তাকে স্কার্ট–শাড়িতে বিশ্বায়িত করার চেষ্টা হোক (গামছা–রানী বিবি রাসেলকে চেনেন তো?), তার অ্যাপীল মোটেও ওসবে নেই। গ্রীষ্মের দুপুরে হালকা সাবান আর ফুলেল/সর্ষের তেলের গন্ধমাখা ভিজে গামছা বারান্দায় না মেলা থাকলে আর কী বাঙালী মশাই আপনি?
নলেন গুড় (ইন ইটস ভেরিয়াস ফর্মস)

ছবি সৌজন্যেঃ Telegraph India
কোনো বাঙালী আছেন যিনি কোনোদিন নলেন গুড়ের কোনো জিনিস খাননি? তাহলে এসে বিলুপ্ত প্রজাতিতে নিজের নাম লিখিয়ে যান। পিঠে, পায়েস, নরমপাক, কড়াপাক, রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা থেকে হালের আইসক্রীমেও ব্যাটা ভাগ বসিয়েছে। কে জানে কত বছর আগে থেকে আপামর বাঙালী হেমন্তকাল এলেই নলেন গুড়ের জন্যে ছোঁকছোঁক করে। ‘পারমিতার একদিন‘ ছবিটি দেখার পর থেকে আমিও Flavour-এর বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজছি, কিন্তু পাইনি। ফ্লেভার তো শুধু গন্ধ নয়, সেটা একাধিক ইন্দ্রিয়কে আহ্বান করে।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: আলুপোস্ত, কলকাতা, গামছা, চিরন্তন, নলেন গুড়, বাঙালী, বিবর্তন, মিষ্টি, শিউলি ফুল

ভোর ব্যাপারটা চিরকালই আমার কাছে খুব elusive ছিল, মানে ছলনাময়ী টাইপের একটা জিনিস।আদৌ আছে কি নেই সেটা খুব ভাল বুঝতাম না এক সময়ে। একদম ছোটবেলায় খুব ঘুমকাতুরে ছিলাম। ভাগ্যি ভাল যে মর্নিং স্কুল ছিল না, ধীরেসুস্থে বেলায় যেতাম। তখন ভোর বলতে মহালয়া আর বছরে যে কদিন দিদার বাড়িতে থাকতাম। মহালয়ার দিন সত্যিই ভোরে উঠে পড়তাম, পাঁচটা নাগাদ রেডিওর আওয়াজে ঘুম ভাঙত। চোখমুখ ধুয়েই বাগানে গিয়ে শিশিরমাখা শিউলি কুড়োতাম। অন্যদিন হয়ত পুজো করার আগে মা কিছুটা শিউলি কুড়োত আরো নানাবিধ ফুলের সাথে, কিন্তু মহালয়ার ভোরটা আমার জন্য তুলে রাখা থাকত। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলার আওয়াজের সামনে বোধহয় চুবড়িতে করে একরাশ শিউলি রাখার দস্তুর থাকা উচিত। তাতে বেশ একটা আলাদা আমেজ আসে, অন্তত ১৪১৯ বঙ্গাব্দ অব্দি তো এসেছে। গরমের ছুটিতে যখন দিদার বাড়ি গিয়ে কদিন থাকতাম, ভোরবেলা নানারকম আওয়াজে ঘুম ভেঙে যেত – জলের ভারী আসত, রাস্তা দিয়ে ফেরিওয়ালা, জমাদার, গঙ্গায় লঞ্চ ধরতে যাওয়া অফিসযাত্রী, ঢাকা বারান্দায় কাজের মাসি বাসন্তীদির টুংটাংখটখট বাসন মাজা, পুরনো আমলের ফ্ল্যাটবাড়িতে কমন পাম্প চালানো নিয়ে ভাড়াটেদের কাজিয়া, ইত্যাদি প্রভৃতি। ঘুম ভেঙেও মটকা মেরে পড়ে থাকতাম যতক্ষণ না মা এসে তুলে দিত জোর করে। তারপর দিদার ভাঁড়ার থেকে লম্বা মোটা বান, তাতে রাংতায় মোড়া নরম মাখন দেওয়া, অথবা কোনোদিন পরোটা আর সাদা আলু–চচ্চড়ি, সঙ্গে বাড়ির নীচের মিষ্টির দোকান থেকে আনা সদ্য গরম জিলিপি বা রসগোল্লা। দাদুর প্রিয় নাতনি হওয়ার দরুণ ভোরবেলাই এইসব সুখাদ্য আমার জুটত। ওখানে দিনের যে সময়ে প্রাতরাশ সারা হয়ে যেত, নিজের বাড়িতে সেই সময়টা আমার জন্যে ভোরই ছিল। তিনতলার বারান্দা থেকে ভোরের গঙ্গার ধার দেখতে পাওয়াটাও ওখানে যাওয়ার একটা অন্যতম আকর্ষণ ছিল।
আরেকটু বড় বয়েসে ভোর ছিল শুধু রবিবারে ওঠা, আঁকার ক্লাসে যাওয়ার জন্যে। উঠে তৈরি হয়ে গিয়ে আঁকা শিখে আবার ফেরারও তাড়া থাকত, সকাল নটার ‘চন্দ্রকান্তা‘ দেখার জন্যে, সাথে প্রাতরাশে রবিবার–স্পেশাল লুচি–আলু চচ্চড়ি–জিলিপি। রবিবার দিনটাকে অন্যদিনের তুলনায় বেশ দীর্ঘ মনে হত ভোরে ওঠার দরুণ। পরপর চন্দ্রকান্তা, মহাভারত/রামায়ণ, জাঙ্গল বুক, ইত্যাদি দেখতাম সারা সকাল, রবিবার বলে পড়ার ছুটি। এরপর দিলাম জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা, দিয়ে চলে এলাম কলকাতায়।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: আহির ভৈরোঁ, কলকাতা, ভোর, স্মৃতি রোমন্থন
কলকাতার কল্লোলিনী রূপটা ছোটবেলা থেকে প্রতিদিন দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আমার ছোটবেলা খুব বেশিদিন নয় অবশ্য, এই মাত্র বছর কুড়ি বা এক যুগ আগে। বড় হয়েছি মফস্বলে, বাবার চাকরিসূত্রে থাকতাম সরকারি কোয়ার্টার্সে। একেকদিন বাবা বাড়ি ফিরে বলত, “আজকে অফিসে ফোন এসেছিল কলকাতা থেকে।” ওই হয়তো কোনো অনুষ্ঠানে নেমন্তন্নের জন্যে বা এমনি কুশল সংবাদ আদান–প্রদান। আমিও আশেপাশের বন্ধু বা খেলার সঙ্গীদের বলতাম গর্বের সাথে, “আজকে দিদার বাড়ি যাচ্ছি, কলকাতায়।” দিদার বাড়ি, যেটা কিনা বরানগরে হলেও না কলকাতা না মফস্বল একটা যায়গা ছিল, সেটা আমার মহত্ত্বে কলকাতাই হয়ে যেত লোকের কাছে। মাঝেমধ্যে অবশ্য কলকাতার ওপর বেশ রাগও হত। কিছু অকালপক্ক দূরসম্পর্কের ভাইবোন ছিল যাদের সাথে দেখা হলেই মফস্বল নিয়ে খোঁটা দিতে ছাড়ত না। তখন মনে মনে ভাবতাম কলকাতায় বড় হলেই বুঝি লোকজন এমন নিষ্ঠুর হয়ে যায়। আরেকটি আশ্চর্য্য ছিল আমার এক সহপাঠিনী, যে কোনো অজ্ঞাত কারণে বালিগঞ্জ থেকে রো্জ ট্রেন ঠেঙিয়ে মফস্বলের স্কুলে আসত।
তখন কলকাতা যাওয়া বলতে বিভিন্ন আত্মীয়দের বাড়ি বা দুর্গাপুজোয়। আর ছিল কিছু স্পেশাল ভ্রমণ, যেমন প্রতি বছর শীতের নরম দুপুরে তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে ট্রেন ধরে বইমেলায় যাওয়া। আরেকটু ছোটবেলায় ক্রিসমাসের দিন যাদুঘর বা চিড়িয়াখানায় ঘুরে ক্লান্ত শরীরে নাহুমস–এর কেকের গন্ধ মেখে সারা নিউ মার্কেট চষে নানারকম লজেন্স কেনা পরবর্তী কয়েক মাসের জন্য। স্কুলে পড়াকালীন কলকাতা যাওয়া মানেই ছিল অনাবিল আনন্দ – নেমন্তন্ন, ছুটির মেজাজ, দিদার বাড়ি, ঠাকুর দেখা আর বেলুড় মঠের ভোগ। আমরা বোধহয় রেকর্ড স্থাপন করেছি, একটানা নয় বছর প্রতিবার অষ্টমীর ঠিক সকাল নটায় বেলুড় মঠের পুষ্পাঞ্জলির লাইনে হাজিরা দেওয়ার। পুজোর সময় আমার কাছে ওই ঘনশ্যাম ঘুসুড়ির খিচুড়ি ভোগ ছিল কলকাতার সমার্থক। আমাদের সময়ে পুজোয় সারারাত্রি ধরে ঠাকুর দেখার এত হিড়িক ছিল না। তাই কোনো বছর সন্ধ্যের ভীড় এড়াতে মাসতুতো–পিসতুতো ভাইবোন আর বড়রা মিলে বিশাল গ্যাঙ নিয়ে মাঝরাত্রে দক্ষিণ কলকাতার সব ঠাকুর দেখতে বেরোতাম। এইরকমই একবার ঘুরতে ঘুরতে ম্যাডক্সে স্কুলের প্রিয় মিসের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ায় সে কী রোমাঞ্চ! ছুটির পর ক্লাসে গিয়ে ঈর্ষান্বিত বন্ধুদের কাছে জাহির করেছিলাম, “জানিস, মিস আর আমি একই জায়গায় ঠাকুর দেখতে গেছিলাম।” কখনো শীতকালে কলকাতায় বিয়েবাড়ির নেমন্তন্ন খেয়ে রাত্রের ফাঁকা ট্রেনে বাড়ি ফেরার সময়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে গরম শালের ওমে ঘুমিয়ে পড়তাম।
Read the rest of this entry »
Like this:
Like Loading...
Tags: আনন্দবাজার পত্রিকা, আমার শহর, কলকাতা, তিলোত্তমা