বাংলা সিরিয়াল আমার প্রিয় বিষয়। তাই পাঠকরা বিরক্ত হলেও এগুলি নিয়ে লেখা আমি থামাতে পারব না। যাঁরা বাংলা সিরিয়ালকে বিষ নজরে দেখেন, তাঁরাও নাহয় ক্ষমাঘেন্না করে এই পোস্টটা পড়েই ফেলুন। আর কিছু নাহোক, বেশ কিছু খোরাক রসদে জুটবে। যদি আপনি পশ্চিমবঙ্গে চাকুরিরত হন, অফিসে লাঞ্চ-ব্রেকে এগুলি নিয়ে পিএনপিসি করতে পারবেন। মায়ের দয়ায় যদি আপনার চায়ের দোকানের দুর্লভ আড্ডা এখনো বজায় থাকে, সেখানেও বিষয়ের অভাব হলে সিরিয়াল গুঁজে দেবেন। আর যদি আপনি প্রবাসী হন, অন্যান্য বাঙালীদের সঙ্গে গেট টুগেদারে আপনাকে তো ‘আপ-টু-ডেট’ থাকতে হবে, নাকি? বিদেশ বিভুঁইয়ে মানসম্মান খোয়াবেন না। বাহা-আলো-কাজল-মেখলা-ভ্রমর-নোলক-তিতলিদের না চিনলে আপনার নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় না দেওয়াই ভাল।
এখন প্রশ্ন হল আপনি বাংলা সিরিয়াল কেন দেখবেন? ওপরে যে তিনটি কারণ বললাম সেই জন্যে? আরে, ওগুলি তো তুচ্ছ। মধ্যবিত্ত বাঙালি হয়ে সমাজে বাঁচতে গেলে আরো হাজারটা কারণে আপনাকে সিরিয়াল দেখতেই হবে। ওয়ার্ডপ্রেস অ্যালাও করলে আমি হাজারখানা পয়েন্ট লিখে দিতাম, তবে ওই আর কী! কয়েকখানা স্যাম্পেল দিই নাহয় আগে।
১। আপনি কি বিবাহিতা মহিলা? তাহলে আপনার অবশ্যই সিরিয়াল দেখা উচিত। মা-শাশুড়ি-কাকিমা-পিসশাশুড়িরা নতুন কী প্যাঁচ কষবেন সংসারে সেটা আপনি সিরিয়াল থেকেই জানবেন। ইন ফ্যাক্ট, আপনি লক্ষ্য করার আগেই দেখবেন শাশুড়ি পুজোর আগে বলছেন, “বৌমা, এবার পুজোয় বাহা শাড়ি নেবে? আমার জন্যেও হালকা রঙের একখানা কিনো নাহয়।” কিছু বোঝার আগেই বাহা শাড়ি নামক গোলকধাঁধায় আপনি দোকানে দোকানে ঘুরপাক খাবেন। নববর্ষের আগে দেখবেন আপনার মা ফোন করে বলছেন, “আহা, আমাকে আবার শাড়ি দিবি কেন, অনেক তো আছে। নিতান্ত দিলে নাহয় তোর শাশুড়ির মত হালকা ছাই রঙের বাহা শাড়িখানা দিস।” কী বুঝলেন? যদি আপনি চাকুরিরতা হন, তবে তো আপনার জন্যে সংসার শাঁখের করাত। সারাদিন কাজ সেরে ফিরে শাশুড়ি আপনার সাথে ঝামেলা করার আগে সন্ধ্যে সন্ধ্যে চা নিয়ে ওঁর সঙ্গেই সিরিয়াল দেখতে বসে পড়ুন। একে অপরের পিন্ডি চটকানোর চেয়ে সিরিয়ালের চরিত্রদের মনের সুখে গালাগাল দিন। পরের দিন কর্মক্ষেত্রে দেখবেন আপনার কোনো না কোনো কোলীগ সিরিয়াল প্রসঙ্গে তুলবেনই।
পুনশ্চঃ বাহা, তার জীবন এবং শাড়ি নিয়ে আমি একটি থিসিস লিখব নিজেকে প্রমিস করেছি। আশা করি কোনোদিন সেটা আপনাদের পড়াতে পারব।