মাছ মিষ্টি & মোর
ডিটেল –
ভাষা – বাংলা, রিলিজ ডেট -৪ জানুয়ারী, ২০১৩, দৈর্ঘ্য – ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট, ছবি – রঙীন, ওয়েবসাইট – মাছ, মিষ্টি & মোর
পরিচালনা – মৈনাক ভৌমিক, চিত্রনাট্য – মৈনাক ভৌমিক, জয় গাঙ্গুলি, প্রসেনজিৎ বিশ্বাস, সংলাপ – মৈনাক ভৌমিক, প্রতিম ডি গুপ্ত, সঙ্গীত – নীল দত্ত
অভিনয়ে – সৌমিত্র চ্যাটার্জি, অনুরাধা রায়, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, শৌভিক কুন্দগ্রামী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখার্জি, রচিতা ভট্টাচার্য্য, রাইমা সেন, অনুব্রত বসু, নেহা পান্ডা, পার্ণো মিত্র
সমালোচনা –
পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের আগের ছবি ‘বেডরুম‘ দেখে মোটামুটি লেগেছিল বলে ঠিক করেছিলাম এই ছবিটিও দেখব।কলকাতায় থাকাকালীন এটা রিলিজ হলেও দেখার সুযোগ না পেয়ে মাসদুয়েক পর দায়িত্ব নিয়ে যোগাড় করে দেখে ফেললাম। টাইটল ক্রেডিট-গান-অ্যানিমেশন ইত্যাদির পর প্রথম দশ মিনিট দেখেই মনে হল, মৈনাক কি বর্তমান বাংলা ছবির দর্শকদের যাকে বলে naive ভাবেন? একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার সাত বছর আমেরিকায় চাকরি করে হঠাৎ কলকাতায় ফিরে বলেন, ‘I want to be a chef, I want to open my own hotel/restaurant.’ কিন্তু কোনটা? একজন ব্যাঙ্কার যদি আরবিট শেফ হতে চান, তিনি নিশ্চয়ই আগে কোনো হোটেল/রেস্তোঁরায় কাজ শিখতে চাইবেন। হোটেল খোলা আর শেফ হতে চাওয়া তো এক জিনিস নয়, মৈনাক। আপনার ব্যাঙ্কারকে এরকম অদ্ভূত কনফিউজড স্টেটে কলকাতায় আনলেন কেন? এমনিতেই ভারতীয় সিনেমাতে গত কয়েক বছরে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কারদের বেশ বোরিং, বড়লোক, ক্ষেত্রবিশেষে গাম্বাট এবং অবশ্যই loser হিসাবে দেখানো হচ্ছে, এই ছবিটিতে আরো একধাপ এগিয়ে পরিচালক ‘রাহুল’ চরিত্রটিকে বাঙালি চেতন ভগত টাইপ দেখাতে চেয়েছেন মনে হয়, যিনি চাকরি ছেড়ে নিজের পছন্দের কাজ করতে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু তাঁর মনোমত কাজটি শেফ হওয়া না হোটেল ব্যবসা করা, সেটা ছবিটির শেষ মুহুর্ত অব্দি বুঝতে পারলাম না।
এই ছবিটি মূলতঃ তিন ভাইয়ের গল্প, যাদের মধ্যে একটাই মিল পাওয়া যায় -তিনজনেই পুরোপুরি ঘেঁটে থাকা চাকরি/প্রেম/জীবন নিয়ে। বড়ভাই রাহুল (শৌভিক) সাত বছরের ব্যাঙ্কিং চাকরি ছেড়ে বউকে (স্বস্তিকা) নিয়ে দেশে ফিরে আসেন, কেন সেটা আপনারাও জানতে চাইবেন ফিল্মটা দেখার পর। মেজ রনি (পরমব্রত) চাকরি করে, প্রেম করে একটি মাড়ওয়ারি মেয়ের (রচিতা) সঙ্গে, তবে বিয়ে করবে কিনা সেটা জানে না। হবু শ্বশুর যৌতুকে ফ্ল্যাট দিতে চাইলে নিতে চায় না, এদিকে সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসার মত মনের জোর তার নেই। রনির চরিত্রের দৃঢ়তার অভাব দেখাতে গিয়ে পরিচালক নিজেও ঘেঁটে ছিলেন মনে হয়। রনির স্কুলের বন্ধুর চরিত্রে রাইমাকে বেশ অদ্ভুত লেগেছে। ট্যাঁশ বাংলা উচ্চারণ এবং খাপছাড়া চিত্রনাট্য নিয়ে তিনিও ঘেঁটে গেছিলেন বোধহয়। ছোটভাই রাজ (অনুব্রত) অভিনয় করতে চায় কিন্তু বিশেষ চান্স পায় না। তার স্ট্রাগল আর নিজস্বতাটুকুই এই ফিল্মের প্রাপ্তি। অনুব্রত বেডরুমের থেকে এই ফিল্মে অনেক ভাল অভিনয় করেছেন, চরিত্রের সঙ্গে একেবারে যথাযথ। বড়বউয়ের চরিত্রে স্বস্তিকার সংলাপগুলি এবং অভিনয় বেশ ভাল। এছাড়া দাদু (সৌমিত্র) আর সানি (পার্ণো)র সাবপ্লটটি আমার অপ্রয়োজনীয় লেগেছে। নেহা পান্ডা ছোট রোলে বুঝিয়ে দিয়েছেন সঠিক সুযোগ পেলে তিনি বেশ অনেকদুর যেতে পারেন। তবে পরপর বেশ কটি ফিল্মে মাড়ওয়ারি/অবাঙালি একঘেয়ে রোল করতে হলে তার পক্ষে দর্শকের মন জেতা সম্ভব নয়।
মধ্য পাতে মাছ, শেষ পাতে মিষ্টি অথবা খাওয়ার শেষে রেশ রেখে যাওয়া ‘মোর’ কোনোটাই পেলাম না ছবিটি থেকে। নীল দত্তের সঙ্গীত মোটামুটি ভালই, দু একটি গান ভাল লাগে বেশ, যেমন “তুমি এবার…‘‘ (সোমলতা)। ছবি শেষে পানের মত কিছু ঝাঁঝালো মুহুর্ত থেকে যায় মনে, যেমন বড় ছেলেকে অনুরাধা রায়ের বলা, “রান্না করবি বলে বিদেশ থেকে চলে এলি!”, বা হবু শ্বশুরকে পরমব্রতর বলা, “নো স্যর, আই ডোন্ট ডু আড্ডা।” দোকানের ট্রেতে রাত্রিবেলা পড়ে থাকা সন্দেশের গুঁড়োর মত কিছু মুহুর্ত দিয়ে বিয়েবাড়ির গোটা মেনু টানা যায় না, সেটা মৈনাক আশা করি পরের ছবিতে বুঝতে পারবেন। যতদিনে এ ছবির রিভিউ প্রকাশ করলাম, ততদিনে বোধহয় তাঁর পরের ছবিও বেরিয়ে যাবে, পাঠকগণ।
আমি কত দিলামঃ 2/5 (পাঁচে দুই)
IMDb কত দিয়েছেঃ 6.5/10
S Kazi
March 10, 2016 at 3:47 PM
ভাল রিভিউ। আমার ও তাই মনে হয়েছে। তবে আপনার রিভিউ স্পয়লার হিসেবে কাজ করবে। লল