
ছবি সৌজন্যেঃ ফেসবুক
রেডিও। শব্দটা শুনলেই কয়েকটা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে; তার মধ্যে প্রথমটা অবশ্যই মহালয়ার ভোর। সেই আদ্যিকালের ঢাউস রেডিও একটা, যাকে ঝাড়পোঁছ এবং কানমলা দেওয়া হত আগের রাত্রে, তারপর ভোর চারটেয় চালু করে মাঝপথে দু চারটে থাবড়াও মারতে হত। আমার ছোটবেলায় ক্রিকেট ফুটবল ম্যাচ টিভিতে দেখানো শুরু হয়ে গেছিল, কাজেই রেডিওতে কমেন্টারি শুনিনি প্রায়। বিবিধ ভারতীতে রফি-লতা-কিশোর থেকে মহিষাসুরমর্দিনী পেরিয়ে যখন গেলাম হাইস্কুলে, একটা ছোট ট্রাঞ্জিস্টর উপহার পেয়েছিলাম আর সেটা দিবারাত্র আমার পড়ার টেবিলে চালু থাকত। বেশি মন খারাপ হলে একেবারে লো ভল্যুম করে বালিশের এক কোণায় জায়গা পেত সারারাত। বোঝাই যাচ্ছে সেটা বেশিদিন টেঁকেনি, আমার অত্যাচারে দেহ রেখেছিল শীঘ্রই। এরপর এল নিজের জমানো টাকা দিয়ে কেনা মহার্ঘ্য মিউজিক সিস্টেম। আজ থেকে বছর ১৮ আগে। সেই যে যাত্রা শুরু হল রেডিওর সঙ্গে, সেটা আরো গাঢ় হল ২০০৩ থেকে, যখন কলকাতার এফ এম চ্যানেলগুলি চালু হল। ব্যাস। তিন বছর টানা রেডিও শুনেছি প্রায় যতক্ষণ বাড়িতে থাকতাম। শুনতে অস্বাভাবিক লাগলেও কতকটা এরকমই ছিল কেসটা। রেডিও মির্চিতে মীরের হাই কলকাতা থেকে শুরু করে আমার ১০৬.২ এফ এম-এ লাগাতার বাংলা গান থেকে রেড এফ এম-এ রাত্রের শোতে জিমি টাংরিকে শোনা – সে এক হ্যালু ব্যাপার ছিল। ফেসবুক ইত্যাদি ঢপের চপ তখনও ঢোকেনি এদেশে, RJরাও সেলেব্রিটি ছিলেন, সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মীরের গলা শুনে বড় আপন মনে হত, যেন পাড়ার ছোড়দা; জিমি টাংরির গলা শুনে শিহরণ জাগত, নীল ছিল ভারী ফচকে, ১০৬.২তে আরেকজন ছিলেন যার নামটা মনে নেই কিন্তু গলাটা ব্যাপক রোম্যান্টিক ছিল। হ্যাঁ, তখন আমরা এরকমভাবে কথা বলতাম – ব্যাপক, একঘর, হ্যালু, চাপ নেওয়া, কেত মারা, আরবিট বাওয়াল দেওয়া, হুব্বা হওয়া, ইত্যাদি প্রভৃতি। যারা ২০০৩-এ জন্মেছিল, তারা পর্যন্ত কৈশোরে পৌঁছে গেল এতদিনে। আমার রেডিও শোনারও ইতি হল।
এবার কাজের কথায় আসি, লেখাটা রেডিও নিয়ে নয়, তার বাই প্রোডাক্টদের নিয়ে। ফেসবুক ও ইউটিউবের কল্যাণে RJরা এখন শ্রোতাদের অনেক কাছাকাছি। ফলে তাঁরা অডিওর পাশাপাশি ভিজ্যুয়াল মিডিয়াম নিয়েও দিব্যি খেলা করছেন। বাংলায় এতরকম শর্ট ফিল্ম ও ওয়েব সিরিজ শুরু হয়ে গেছে কিন্তু RJরা মিলে কোনো ওয়েব সিরিজ করবেন ভাবতে পারিনি। প্রবাসে বোর হতে হতে হঠাত খুঁজে পেলাম রেডিও মির্চির RJদের দিব্যি সব কীর্তিকলাপ। সত্যি বলতে কী, এত বছর বাংলার বাইরে থেকে রেডিও মির্চি মানেই আমার কাছে এখনও মীর, নীল, দীপ, শ্রী এরাই। নতুন প্রজন্মের দুই RJ সোমক আর অগ্নি কিন্তু ফাটিয়ে দিয়েছে, কাকা! রেডিও মির্চির ইউটিউব চ্যানেলে OMG এবং #typo নামের দুটি ওয়েব সিরিজ একঘর লাগল।
OMG – O Maa Go!-এর কন্সেপ্টটা দারুণ। মা-বাবা-ছেলে আর দৈনন্দিন সাংসারিক বাওয়াল, কার জীবনে নেই বলুন তো? ছেলের অফিসে ফোন করে “বাবু, শোন না আজ কী হয়েছে…” থেকে “তোর আর তোর বাবার জন্যে খেটে খেটে আমার জীবন কয়লা হয়ে গেল,” – এরকম সংলাপ কে শোনেনি আজ অব্দি? শুধু ছেলে কেন, মেয়ের মায়েরাও একই কথা বলে থাকেন। ডিনারে মাটনের আশা দিয়ে শুরু করে চিকেন, ডিম হয়ে শেষে মোচায় নেমে আসা তো আমাদেরও হয়েছে! মায়ের ইমেল অ্যাকাউন্ট খুলতেও একই বিপত্তি। আমার মা আজও নিজের ইমেলের পাসওয়ার্ড জানেন না। সোজা কথায়, গোলা কন্টেন্ট এবং স্বাভাবিক অভিনয় হল OMG-এর USP। মায়ের ভূমিকায় সোমক, ছেলে অগ্নি আর বাবার ভূমিকায় মাঝে মাঝে মীর একেবারে স্বতস্ফূর্ত। পাঞ্চলাইনটা আমার দারুণ লেগেছে, “মা বলে সহ্য করছে, বৌ কিন্তু সহ্য করবে না!”
#typo – types of ____ হল বিভিন্ন ঢংয়ের মানুষ নিয়ে একেকটা এপিসোড। আবারও সোমক ও অগ্নি মুখ্য ভূমিকায়। যে কটি এপিসোড দেখেছি তার মধ্যে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে types of relatives – ছোড়দাদু ও পিসেমশাই একদম যথার্থ। কার পরিবারে এরকম ইয়ে জ্বালানো আত্মীয় নেই বলুন তো? বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে বিবিধ ভাবে ছড়ানো ছেলেপিলের সংখ্যাও কিছু কম নয়। তার মধ্যে দু-একজনকে দেখে নিজের বিয়ের কথাও মনে পড়ে গেল!
সব মিলিয়ে ঘ্যাম হচ্ছে সিরিজ দুটি। আরও এপিসোডের জন্যে রেডিও মির্চির ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে চোখ রাখলাম। আপনারাও রাখতে পারেন। এই RJরা হতাশ করবে বলে মনে হচ্ছে না।
Aparajita Dey
April 10, 2018 at 11:54 AM
১০৬.২তে আরেকজন ছিলেন যার নামটা মনে নেই কিন্তু গলাটা ব্যাপক রোম্যান্টিক ছিল – Rupam bole ekjon ki? Raater dike je thakto?
PRB
April 10, 2018 at 3:38 PM
না রূপম নয়, দুপুরের দিকে থাকতেন সেই RJ। নামটা কিছুতেই মনে পড়ছেনা।
razib
May 9, 2018 at 12:29 PM
nice
আকাশ
June 20, 2018 at 2:55 AM
রেডিও থেকে ভিশুয়াল মিডিয়ায় নিজের ছাপ রাখতে সক্ষম রেডিও মিরচি। মরীচিকা ব্লগ টি জীবন এর কোন অংশ টি কে তুলে ধরতে চাইছে?