না না, আমি ডারউইন সাহেবের মানসপুত্রী নই, বিবর্তন নিয়ে হেজিয়ে আপনাদের সময় নষ্ট করব না। পাতি বক্তব্য হচ্ছে এই – বাঙালী দিন দিন পালটে যাচ্ছে বলে অনেক মানুষ মুষড়ে পড়ছেন। তাদের জন্যে ভেবে বের করলাম কয়েকটা জিনিস যা আজও বাঙালীর জীবনে বিবর্তন থেকে বাদ পড়ে আছে। অর্থাৎ এমন কিছু ব্যাপার যা আজও বাঙালীর আছে আর আশা রাখি চিরকাল থাকবে।
গামছা
কটা বাঙালীকে দেখেছেন যারা গামছা ব্যবহার করে না? চিরন্তন আরামের লাল সবুজ চেক–কাটা কাপড় ছেড়ে গাবদা রোঁয়া ওঠা ভারী তোয়ালেতে কজনই বা স্বস্তিতে থাকেন? উত্তর কলকাতার রাস্তার ধারের কলে স্নানরত থেকে বহুতল ফ্ল্যাটের বারান্দায় শুকোতে দেওয়া গামছার খুব বেশি তফাত নেই। একজন হয়ত বসিরহাটের কুলীন আর অপরজন হাতিবাগান বাজারের সদস্য।
একদিকে হয়ত কলের অবিরত গঙ্গাজলে স্নানের পর কাপড় পরে গামছাকে নিংড়ে ফুটপাথের রেলিঙে মেলে দেওয়া হয়, অন্যদিকে অত্যাধুনিক শাওয়ারে ইষদুষ্ণ জল আর সুগন্ধী সাবানের ফেনা আলতো করে মুছে এগারোতলার বারান্দায় মেলা হয়। গামছা আগেও ছিল, এখনো আছে, অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। যতই তাকে স্কার্ট–শাড়িতে বিশ্বায়িত করার চেষ্টা হোক (গামছা–রানী বিবি রাসেলকে চেনেন তো?), তার অ্যাপীল মোটেও ওসবে নেই। গ্রীষ্মের দুপুরে হালকা সাবান আর ফুলেল/সর্ষের তেলের গন্ধমাখা ভিজে গামছা বারান্দায় না মেলা থাকলে আর কী বাঙালী মশাই আপনি?
নলেন গুড় (ইন ইটস ভেরিয়াস ফর্মস)
কোনো বাঙালী আছেন যিনি কোনোদিন নলেন গুড়ের কোনো জিনিস খাননি? তাহলে এসে বিলুপ্ত প্রজাতিতে নিজের নাম লিখিয়ে যান। পিঠে, পায়েস, নরমপাক, কড়াপাক, রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা থেকে হালের আইসক্রীমেও ব্যাটা ভাগ বসিয়েছে। কে জানে কত বছর আগে থেকে আপামর বাঙালী হেমন্তকাল এলেই নলেন গুড়ের জন্যে ছোঁকছোঁক করে। ‘পারমিতার একদিন‘ ছবিটি দেখার পর থেকে আমিও Flavour-এর বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজছি, কিন্তু পাইনি। ফ্লেভার তো শুধু গন্ধ নয়, সেটা একাধিক ইন্দ্রিয়কে আহ্বান করে।
নলেন গুড়ের এই ফ্লেভার হয়ত বিগত শতাব্দীর থেকে অনেকটাই কমে গেছে ভেজাল আর এসেন্সের চক্করে, তাও বাঙালীর কাছে এখনো শীতকাল আর নলেন গুড় সমার্থক। রসগোল্লা না হলেও চলবে, কিন্তু নলেন গুড়ের নরমপাক সন্দেশের জন্যে আমি খুনখারাপিও করে ফেলতে পারি। বাংলায় এবং বাইরে এখন নলেন গুড়ের স্বাদ–গন্ধ–ফ্লেভার বদলে গেলেও কনসেপ্টটা বদলায়নি। পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত তাকে শুধু আইসক্রীমেই চিনবে (যা দিনকাল পড়েছে!), কিন্তু আমাদের ছোটবেলার সঙ্গে শীতকালের সেই সুগন্ধী মিষ্টিমাষ্টা এখনও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে।
শিউলি ফুল
সুগন্ধবিলাসী হওয়ার দরুণ এইটি আমার বড়ই প্রিয়। মহালয়া, শিউলি ফুল আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর ত্রহ্যস্পর্শ গত দুই প্রজন্মের বাঙালীর মজ্জাগত হয়ে গেছে। আশ্বিন মাস থেকেই শিউলির আনাগোনা শুরু হয়ে যায় বাংলায়। গলি দিয়ে হেঁটে হয়ত কাজে যাচ্ছেন, টুপ করে দু চারটে নরম মুক্তোর মত গায়ে মাথায় পড়ে আপনার মন ভাল করে দেবে, সঙ্গে শুঁয়োপোকা ফ্রি।
দুর্গাপুজোর সময় জানি কাশ ফুলের দর বেশি তার সিনেম্যাটিক ভ্যালুর জন্যে, কিন্তু আমার কাছে শিউলি পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজকাল মার্কিন দেশেও শরতকালে কাশ ফুলের মত দেখতে একটা ব্যাপার হয় মাঠেঘাটে, তাই সেখানকার পুজোর সাজসজ্জাতেও কাশেরই রমরমা। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয় যে কাশফুল কোনোদিন বিলুপ্ত হয়ে গেলেও শিউলি হবে না। তার কমলা বোঁটা প্রতি দুর্গাপুজোর আগেই বাঙালীর মনের কোণে উঁকি দেবে।
আলু পোস্ত
কিছু বলবেন? জানি তো আপনার মনটা আস্তে আস্তে দ্রব হয়ে চোখটা আবেশে বুজে আসছে। লালায়িত হয়ে আপনি সঙ্গে বিউলির ডালের কথাও ভাবছেন, যদিও সেটা সবার কাছে অপরিহার্য নয়। আলুপোস্তটা অবশ্যই। আমার চেনা পরিচিত কারুর মধ্যে পোস্তয় অ্যালার্জি শুনিনি এখনো। কেউ থাকলে আমার সমবেদনা গ্রহণ করবেন। আপনি জানেন না আপনি কি হারিয়েছেন। সোনালী দানার পোস্ত আলু আর কাঁচালঙ্কার সঙ্গে মাখো মাখো হয়ে যখন আপনার সামনে আসে, কে মাথার ঠিক রাখতে পেরেছে আজ অব্দি? একথালা ভাত স্যাটাস্যাট উড়ে যায় অন্যান্য নিকৃষ্ট ডাল–তরকারি কে অবহেলা করে। বাঙালী যবে থেকে পোস্ত রান্না করতে শিখেছে, আলুর সঙ্গে তার মিলন ঘটিয়ে একটা নিঃশব্দ বিপ্লব এনে ফেলেছে। এবং অন্য বিলুপ্তপ্রায় রান্নার তুলনায় আলুপোস্তর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে আরো বাড়ছে। অবাঙালী বৌমারা টুক করে আলুপোস্ত রেঁধে শ্বশুরকুলের মন জয় করে নিচ্ছেন। এ জিনিস কোনোদিন হারাতে পারে না, এক যদি না পৃথিবী থেকে পোস্ত চিরকালের মত শেষ হয়ে যায়।
এসব ভাল ভাল ব্যাপার নিয়ে কথা শেষ হইয়াও হইবে না শেষ, হয়ত ফিরে আসবে আবার।
Rimli Dey
November 24, 2013 at 12:53 AM
Jug jug jio alu posto gamcha bangali! tobe Priyanka nolen gur er latest 1ta addition na kore parlam na, nolen gurer cake. recently amar ek friend ke khawanor por se bollo ‘eto dekhchi naru cake’ 😛
pridreamcatcher
December 10, 2013 at 12:36 PM
নলেন গুড় কেক তোমার কাছেই প্রথম শুনলাম, রিমলি! আশা করি খেতে দারুণ হবে।
Ruso Bhattacherjee
December 9, 2013 at 1:16 AM
Blog ti darun.
(To get my point across quickly, I will write the rest of the comment in English.)
I am sure that there are several people who like your blog like me. So, must place that Follow widget somewhere on the page where people can easily find it. Like many other popular blogs, I think the best place to put it would be before the Search widget on the right panel of the page. The blog is very good with great content, good font and a clear theme.
Amar bissas, apnar blog arro onek bangali manusher mon joy korbe.
pridreamcatcher
December 10, 2013 at 12:38 PM
রুশো, ব্লগটি মন দিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার অভিযোগটি আরও অনেকে করেছেন। সবার সুবিধার্থে ফলো বোতামটি সাইডবারের একদম ওপরে দিয়ে দিলাম। তবে, মাঝে মাঝে ব্লগের নীচ অব্দিও স্ক্রল করে দেখবেন 😛
Arijit Banerjee
December 10, 2013 at 4:32 PM
blog tar design bodlano hoyechhe, bhalo bhalo 🙂
Subhadip
December 14, 2013 at 6:49 PM
এমন কিছু ব্যাপার যা আজও বাঙালীর আছে আর আশা রাখি চিরকাল থাকবে। – ei topic-e likhle aamar mon-e hoy ekta bishal boro byapar tor lekhay miss korechhis , seta hochhe “MAMARBARI” 😀
স্মৃতিলেখা চক্রবর্ত্তী
April 10, 2014 at 9:47 AM
কি বলচেন দিদি, আমি মাইক্রোওয়েভে শুক্তো-মুড়িঘণ্ট বানিয়ে ফেলচি; আর আপনি বলচেন ‘বিলুপ্তপ্রায় রান্না’।